সম্পাদকীয়

  ১০ অক্টোবর, ২০১৯

রেল ব্যবস্থাপনা উন্নত হোক

দেশের অধিকাংশ সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় সে উন্নয়নের প্রশংসা করতে কার্পণ্যও করেনি। সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে। এই উন্নতির বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশের জাতিগত সহাবস্থান।

১৯৯৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারত রত্ন’ পাওয়া অমর্ত্য সেন বলেন, বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে গড় আয়ু ও নারী সাক্ষরতার ক্ষেত্রে তারা যে উন্নতি করেছে; তা প্রশংসার দাবি রাখে। আমরাও তার এই মতামতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে চাই, কেবল আয়ু ও নারী সাক্ষরতার ক্ষেত্রেই নয়; প্রবৃদ্ধির সূচক এবং মাথাপিছু গড় আয়ও বলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতি কতটুকু। ঠিক এ রকম একটি পরিস্থিতিতে আমাদের রেল খাতে যেটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা, আমরা সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হইনি। আমরা চাই, পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি হোক।

এদিকে যাত্রীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেড়েছে টিকিটের দাম। তবে রেলওয়েতে সেভাবে গুণগত মান বাড়তে দেখা যায়নি। রেলপথ বাঁচাতে ও বাংলাদেশ রেলওয়েকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনায় ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘রেলপথ মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। কিন্তু আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন ও রেল বাজেট বাড়লেও একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে রেলস্টেশন। পড়ে আছে মেয়াদোত্তীর্ণ রোলিং স্টক, জরাজীর্ণ রেল-কারখানা, লোকবল সংকট, নিম্নমানের যাত্রীসেবা। এ অবস্থা থেকে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি রেলওয়ে।

রেললাইন, রেলস্টেশন, রেল-কারখানা এবং ভূমিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো এখনো দেশের বৃহত্তম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রেলপথের বেশির ভাগের অবস্থা ভালো নয়। রেলপথে মোট ৩ হাজার ৬টি রেলসেতুর বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে। আশা করি, সরকারের ভাবনাও আমাদের মতো। তাই এ সেক্টরে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার এবং জরুরিভিত্তিতে এর সংস্কারে এগিয়ে আসা উচিত।

বাস্তবতা বলছে, বিগত সময়ে বিনিয়োগ বাড়লেও সুপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকার কারণে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারেনি। যাত্রী বাড়ানো, আয় বাড়ানো ও লাভজনক করার ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোর প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ সর্বত্র। অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। তাই প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনকে সংস্কার করে যাত্রীদের জন্য স্বস্তিদায়ক ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে হবে। উন্নত শৌচাগার যার একটি পূর্বশর্ত। যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য এ শৌচাগারের সংখ্যা পর্যাপ্ত হতে হবে এবং এর পরিচ্ছন্নতাই যেন বাড়াতে পারে স্টেশনের মর্যাদা।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ রেলওয়েই হতে পারে আগামীর সর্ববৃহৎ রেভিন্যু সংগ্রাহক। কেবল যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা এবং সেবার মান বাড়ানো এবং কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে তা করা সম্ভব। দেশের প্রত্যেক মানুষ বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকারের দ্বারা এ কাজ করা সম্ভব। আমরা সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এ কাজে তার সাফল্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রেললাইন,রেলওয়ে,রেল ব্যবস্থাপনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close