সম্পাদকীয়

  ৩০ মার্চ, ২০১৯

অগ্নিকাণ্ডের শেষ কোথায়...!

মৃত্যু! তাও যদি হয় আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। কত যন্ত্রণা, কত কষ্ট, সেটা নিজে না পুড়লে অনুভব করা যাবে না। কত ভয়ানক আর যন্ত্রণাদায়ক তা আগুনে পোড়া মানুষকে দেখলে কিছুটা হলেও অনুভব করা যেতে পারে। আমরা কেউই এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাই না। তবু অগ্নিদগ্ধ এসব মানুষের সঙ্গে প্রায়ই মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমরা চাই আর না চাই।

শুধু সমবেদনা আর শোক প্রকাশই যেন আমাদের ধর্মে পরিণত হয়েছে। আমরা কেউই নিরাময়ের কথা ভাবি না। উপায়ের খোঁজ করি না। সমাজ যখন আত্মকেন্দ্রিকতায় ডুবে থাকে, তখন এ ধরনের ঘটনা অনেকটা সাধারণ ঘটনার পর্যায়ে নেমে আসে। রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মৃত মানুষের কাফেলা আমাদের সে কথাই স্মরণ করে দেয়।

এ আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে আমাদের কোনো মুক্তি নেই। কেননা, সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করার জন্যই তার জন্ম এবং বিকাশ। সমাজকে বিকশিত করার মধ্য দিয়েই নিজের বিকাশ, ইহাই সত্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস সে কথাই বলে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা তা ভুলতে বসেছি।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলী ও চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড তার সাক্ষ্য বহন করছে। কেবল নিজের লাভের কথা চিন্তা করে এ রকম একটি ঘন আবাসিক এলাকায় যারা কেমিক্যাল গোডাউন এবং কারখানা গড়ে তুলতে পারেন, তারা যে কতটা আত্মকেন্দ্রিক তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের কেউই সমাজে বসবাসরত প্রতিবেশীর ভালো-মন্দের কথা চিন্তায়ও আনেননি। আর সে কারণেই ঘটে চলেছে একের পর এক আগুনের মহোৎসব। পুড়ছে মানুষ ও মানবতা।

নিমতলী, চকবাজার, বনানী...। এরপর কোথায়...? সেটার জন্য অপেক্ষা। আগুন লাগবে, তবে এমন পরিকল্পিতভাবে! অথবা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে? এ যেন মেনে নেওয়া যায় না। কেউই তা মেনে নেননি। আমরাও সেই না মানার পক্ষে। আমরা আত্মকেন্দ্রিকতার বাইরে এসে সামাজিক মানুষে পরিণত হতে চাই। আমাদের আত্মকেন্দ্রিক চিন্তার কারণেই বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে ২৫ জন নিরীহ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি। আত্মকেন্দ্রিকতার কারণেই পুরো ভবনকেই চোখের সামনে পুড়তে দেখেছে মানুষ। ভবনের ভেতরে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কতটা দুর্বল, তা অনুমান করার জন্য খুব বেশি তদন্তের প্রয়োজন পড়ে না।

বাংলাদেশের সবচেয়ে শৌখিন এলাকার একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের চিত্র যদি এই হয়, তা হলে সাধারণের অবস্থা নিয়ে আলাদা করে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। অনেকেই হয়তো বলবেন, এ দায় সরকারকে নিতে হবে। আমরাও সেই একই কথা বলি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের ওপর সব দায় চাপিয়ে দেওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না। কিছু কিছু দায় নিজেদেরও নিতে হয়। আসুন না পুরান ঢাকা থেকে আমরা কেমিক্যালের শেষ কনিকাটাকেও সরিয়ে একটি নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাই। বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ত্ব দিয়ে নির্মাণকাজ সমাধা করা এবং তা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করা।

পরিশেষে বলব, সরকারকে আইনের প্রয়োগকে শতভাগে উন্নিত করে তা সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। সরকারি কর্মকর্তাদের যেন কোনোভাবেই আইনের আওতার বাইরে রাখা না হয়। কেননা, যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো হবে, সেই সরিষার ভেতরেই যদি ভূতের অবস্থান হয়, তা হলে ভূত তাড়াবে কে!

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অগ্নিকাণ্ড,আগুনে নিহত,চকবাজার ট্রাজেডি,বনানী অগ্নিকাণ্ড,অগ্নিদগ্ধ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close