সম্পাদকীয়
আমাদের শিশুরা রাস্তায় কেন
এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে? পরিস্থিতি বলছে জবাব নেই। কেন নেই? পরিবেশ বলছে, রাজনীতিকরা এখন শুধু রাজনীতি নিয়ে থাকেন না। বাণিজ্যও করেন। তারা এখন টু ইন ওয়ান। এদের মাঝে কেউ কেউ আবার থ্রি ইন ওয়ানও আছেন। তবে সব রাজনীতিকের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। আবার রাজনীতি করলেই যে বাণিজ্য করা যাবে না, এমন কথাও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অনৈতিক বাণিজ্য সব সময়ের জন্যই অগ্রহণযোগ্য। আর পরিবহন সেক্টরের প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে চলছে এই অনৈতিক বাণিজ্যের মচ্ছব। যে মচ্ছবের কারণেই আজকের নৈরাজ্য। আমাদের সন্তানরা আজ রাস্তায়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
দুঃখ, কষ্ট আর বেদনার ভার সহ্য করতে না পেরেই আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমে এসেছে। ফোঁটায় ফোঁটায় জমে থাকা কষ্টগুলো আজ যেন এক সাগরে পরিণত হয়েছে। কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে বলে রাস্তার কিনারে দাঁড়ানো সহপাঠীর জীবন কেড়ে নিয়েছে বেপরোয়া চালকের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কেড়ে নিয়েছে দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব নামে দুই শিক্ষার্থীর জীবন। শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে বলছে, তারা এই নৈরাজ্যের অবসান চায়। এ চাওয়া আজ আর তাদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এর একটি ইতিবাচক সমাধান প্রয়োজন। আর এ প্রয়োজনের কথাই ভাবছে সাধারণ মানুষ।
দুঃখ, কষ্ট আর বেদনার ভার সহ্য করতে না পেরেই আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমে এসেছে। ফোঁটায় ফোঁটায় জমে থাকা কষ্টগুলো আজ যেন এক সাগরে পরিণত হয়েছে
সমাধানের প্রয়োজনের কথা ভাবলেই এর সমাধান হয়ে যাবে, বাস্তবতা তা বলে না। বাস্তবতা বলছে, সাধারণ মানুষের হাতে এর সমাধান নেই। সমাধান সরকারকেই করতে হবে। সাধারণ মানুষ সরকারের পাশে থাকবে। এ রকম ভাবনা মাথায় নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর এসব কাজের মনিটরিং করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন সরকারের মন্ত্রীরা। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যৌক্তিক। সরকার তাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
আমরা আশা করি, দাবি বাস্তবায়নের যে কাজ শুরু হয়েছে তা মাঝপথে এসে যেন থমকে দাঁড়িয়ে না পড়ে। আমরা ঘর পোড়া গরু। অতীতের অভিজ্ঞতাও সুবিধার নয়। একই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, ৪৭ বছরের আবর্জনা এক দিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। সরকারকে সময় দিতে হবে। সরকার অ্যাকশনে যাবে এবং সাধারণ মানুষ সেই কর্মকাণ্ডের পাশে ভ্যানগার্ডের মতো সহযোগিতা জোগাবে। শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবিই ছিল নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ আরো আট দফা। বিষয়টি সরকারের ভাবনায় আছে এবং সরকার ইতিবাচক ভূমিকায় এগিয়ে আসবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল