অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

  ০৮ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশের নারীদের অগ্রযাত্রা

ছবি : সংগৃহীত

একটি প্রবাদ রয়েছে, একজন পুরুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা। আর একজন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া মানে পুরো পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা। জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতিতে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কেননা, নারী সমাজেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, তেমনি দেশের উন্নয়নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও নারীর অবদান দৃষ্টিগোচর হবে, যা ইতোমধ্যে চোখে পড়ার মতো। কাজেই নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষা জাতি গঠনের শুধু মূল মন্ত্রই নয়, শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। একটি রাষ্ট্রে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি ও নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়লে দেশ অগ্রগতি, উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একসময় বাঙালি নারীসমাজ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। শিক্ষা-দীক্ষার বাইরের পরিবর্তিত দুনিয়ার সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় ছিল না। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার পথ দেখালেন। তিনি যে নারী শিক্ষার আলো প্রজ্বালিত করেন সেই আলোয় আলোকিত হলেন নারীসমাজ। সমস্ত বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করে নারীসমাজ শিক্ষাগ্রহণে ব্রতী হয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তাই বর্তমান নারীসমাজ শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। আজ নারীসমাজ অন্ধ অনুকরণ থেকে মুক্ত।

প্রতি বছর বিশ্বে মার্চ মাসের ৮ তারিখে বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারীশ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি-বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারীশ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় : ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে। বিশ্বের সব দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণ কর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। কবি নজরুলের এ মহান বাণীটির অর্থ হলো জেন্ডার বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে নারীর অগ্রগতি ও দেশের উন্নয়ন। মোটা দাগে বলা যায়, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি দেশের উন্নয়ন ঘটে। বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই নারী-পুরুষের যৌথভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে গণতন্ত্র উন্নয়ন সুসংহত হবে তেমনি সুশাসন দৃঢ় হবে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারী আর পিছিয়ে নেই, নারীর উন্নয়ন হয়েছে তার বড় প্রমাণ নারীর ক্ষমতায়ন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। একসময় বাংলাদেশের প্রশাসনে নারীর পদচারণে তেমন লক্ষ করা যায়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬) ক্ষমতায় আসার পর তিনিই প্রথম সচিব, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে নারী নিয়োগ দেন। সে থেকে বর্তমান পর্যন্ত নারীর অগ্রগতি ক্ষমতায়নের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যাযে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন। জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধি আইন তৈরিসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে নারী এলাকার উন্নয়নে, যথেষ্ট অবদান রাখছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পরিষদে সরাসরি গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নারী সদস্যের সরব উপস্থিতিই প্রমাণ করে পুরুষের মতো নারীর অগ্রগতি হয়েছে। এটা শুধু কথার কথা নয়, বাস্তব ও দৃশ্যমান। আজ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল সামিট অব উইমেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। শুধু যুক্তরাজ্যই নয় প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্য দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমাদের সংবিধানে শুধু নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে। তাই কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে গেলে নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। যে কথা বেগম রোকেয়া, কবি নজরুল অনেক আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ সর্বক্ষেত্রেই নারীর ক্ষমতায়ন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। ইউনিয়ন নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে নারী যে অগ্রসরমান সে চিত্রই ফুটে ওঠে।

বেগম রোকেয়া যে নারী জাতির অগ্রগতি উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন, তা আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। এগিয়ে চলেছে নারী, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বর্তমান সমাজে নারী সেকালের বৃত্তের মধ্যে বন্দি নেই। সমাজব্যবস্থার আরোপিত শৃঙ্খল ভেঙে আত্মবিশ্বাসে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম রোকেয়ার যদি জন্ম না হতো তাহলে ভারত উপমহাদেশে বাংলার নারী এখনো সে অন্ধকার যুগেই পড়ে থাকত। তাই তিনি অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বাংলার নারীদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছেন সেই শিক্ষার আলোতেই আজ বাংলার নারী আলোকিত জীবন পেয়েছে। তাই তারা অগ্রগতির পথে উন্নয়নের পথে ধাবমান। তাদের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। নারী শুধু রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নয়, একজন পুরুষের সঙ্গে তারাও সমানভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। উপযুক্ত শিক্ষা ও অনুকূল পরিবেশে বিস্তৃতি ঘটলে নিজের মেধা ও মননে নারী নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি তা প্রমাণ করে। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতির মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। কারণ রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। রাজনীতি ও ক্ষমতা কাঠামো থেকে অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে বাদ দিয়ে সত্যিকার অর্থে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুটবলে মেয়েদের আগ্রহ বাড়ছে। এরই মধ্যে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, মেয়েদের ফুটবলে শুরু থেকেই দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি। তার পরও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের নারী খেলোয়াড়রা অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর রাতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলের ফাইনালে ১-০ গোলে ভারতকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে সাফ অনূর্ধ্ব ১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৮-এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ২০১৬ এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়ন, ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব ১৫, ২০১৮ সালের জকি কাপ, ২০১৯ সালের বঙ্গমাতা আন্তরর্জাতিক ফুটবলে অনূর্ধ্ব ১৯ যুগ্মভাবে জয় করে আমাদের মেয়েরা। ২০১৮ সালেই মালয়েশিয়ায় ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। এ ছাড়া টানা দুবার (২০১৮, ১৯) আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সালমা বাহিনী। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিকখ্যাত এস এ গেমসের নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশ নারী দল প্রথম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এ আসরেই বাংলাদেশের নারী তীরন্দাজরা স্বর্ণ জিতে রেকর্ড করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি পুরুষ দলের নারী কোচ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ২৬ বছর বয়সি বাগেরহাটের মেয়ে মিরোনা।

গত বছর এসএ গেমসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ৬টি স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা, এ ক্ষেত্রে মারিয়া আক্তার সীমাও টানা দুবার সোনা আনেন দেশের জন্য। এ ছাড়া ২০১৬ সালের এসএ গেমসে বাংলাদেশ যে চারটি স্বর্ণপদক জয় করে, তার ৩টিতে মেয়েরা জিতেছিল। ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে ১৮টি স্বর্ণপদকের মধ্যে ৮টি পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। একসময় আমাদের মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে অনেক বাধা ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে প্রমিলা ফুটবল চালু করে। স্কুলপর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং প্রাথমিক স্কুলপর্যায় থেকে মেয়েদের ফুটবল দল গঠনের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের গড়ে তোলার উদ্যোগও গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬৩ হাজার ৫০৯টি দল এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল-২০১৫-তে ৬৩ হাজার ৪৩১ দল অংশগ্রহণ করেছে। বিশ্বের আর কোথাও এত বৃহৎ আয়োজনে ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় না

বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি আবার দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে নিরক্ষর অবহেলিত অদক্ষ রেখে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সংবিধানে নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীর অগ্রগতি শিক্ষা অর্জন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য সরকার শিক্ষাকে অগ্রধিকার দিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ফলে নারী শিক্ষায় আজ নবযুগের সূচনা হয়েছে। তাই নারীসচেতনতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। শিক্ষার আলো থেকেই তাদের বঞ্চিত করে নারীর অগ্রগতি উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। আবার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে পুরুষের সমকক্ষতা অর্জন কখনো সম্ভব নয়। তাই আমাদের সংবিধান মোতাবেক শিক্ষাগ্রহণ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে কিছু বাধা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখনো নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। তাদের পথচলা সুগম হয়নি। ঘরে-বাইরে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। অথচ নারীরা আজ ঘরে-বাইরে সর্বত্র কাজ করছে পুরুষের চেয়ে বেশি। নারীর এ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে। বাল্যবিয়ে, ঝরে পড়া নারীর শিক্ষা অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় বাধা। তবুও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ফলে অনেক নারী নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষমতা অর্জন করছে। সুতরাং প্রকৃত শিক্ষার আলো প্রবেশ করাতে হবে নারীর সুকমল অন্তর মানসপঠে। যাতে করে একজন নারী সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তবে এ বেড়ে ওঠার পথে নির্যাতনসহ সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,নারীদের অগ্রযাত্রা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close