মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা প্রতিনিধি

  ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে মহাসড়কে থাকবে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র সড়কপথ। একে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনও বলা হয়। স্বাভাবিক সময়ই এই মহাসড়ক ব্যস্ততা দেশের অন্যসব মহাসড়ক থেকে কয়েকগুণ বেশি। আর ঈদ উপলক্ষে আরও কয়েক লাখ মানুষ নতুন করে যুক্ত হবে। তাই এই মহাসড়কের যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নানা আয়োজন করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

জানা গেছে, এই মহাসড়কে যুক্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে কয়েক লাখ মানুষ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরবে। এই ঈদ যাত্রায় যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয় এবং নিরাপদে বাড় ফিরতে পারে সেকারণেই এসব উদ্যোগ পুলিশের। বুধবার (২৭ মার্চ) আসন্ন ঈদ উল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন, নিরাপদ এবং যানজট মুক্ত রাখার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ এক মতবিনিময় সভায় এসব উদ্যোগের কথা জানান। মহাসড়কের একটি হাইওয়ে হোটেলের মিলনায়তনে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাছাই

মত বিনিময় সভায় হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদ ঘিরে এই মহাসড়কের অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এর মধ্যে, বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার বাজার ও ইউটার্ন, ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), আলেখারচর বিশ্বরোড়, বিসিক মোড়, চৌদ্দগ্রাম বাজার, লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউর্টান, সীতাকুন্ড বাসস্ট্যান্ড/বড় দারোগারহাট স্কেল।

কম গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি স্থান হিসেবে শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, কোর্টবাড়ী ইউটার্ন, জাগুরঝুলি কাটা, নুরজাহান হোটেলের সামনের কাটা, সদর দক্ষিণ থানার সামনের কাটা, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, বারবকুন্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানগুলো অধিক নজরে রাখার কথা জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

যে কারণে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে

মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি ক হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের যানজটের বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এরমধ্যে মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা নির্মাণ, মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা, অবৈধ পার্কিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ সড়কের কারনে, পণ্যবাহী গাড়ীতে ওভার লোডের কারনে ধীরগতি, পথচারীদের অসচেতনতা, টোলপ্লাজায় ধীর গতিতে টোল আদায়, দুর্ঘটনার কারনে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্রুটিপূর্ণ/ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে বিকল হয়ে যাওয়া, সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে গাড়ি চালনা, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাড়ি চালনার ফলে।

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা সূত্রমতে, মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে, অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম। সড়কজুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশ। বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্নে হবে। এ ছাড়া যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রতিযোগীতাহীন গাড়ি চালানোর পাশাপাশি সড়ক পারাপারে পথচারীদের সচেতন থাকার পরামর্শ হাইওয়ে পুলিশের।

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৩১ কিলোমিটার সড়ককে ভোগান্তিমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যাগ।

কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, সেক্টর থাকবে দুটি ও সাব সেক্টর ২১টি, মোবাইল ডিউটি থাকবে ৩৪টি, পিকেট ডিউটি ১৫টি, কুইক রেসপন্স টিম মোটরসাইকেলযোগে থাকবে ১৫টি, পিকআপ যোগে ১৫টি। স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ১টি, রেকার ডিউটি সরকারি ৫টি ও বেসরকারি ৬টিসহ সর্বমোট ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি ২টি, কন্ট্রোলরুম ১টি, অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৩৫টি।

এভাবে সকল পদের সর্বমোট ৬৮০ জন পুলিশ ও ৩৫০ জন কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য সার্বক্ষণিক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মহড়া দেবে। একইসাথে জেলা পুলিশ মহাসড়কের পাশ্ববর্তী থানা এলাকায় যেখানে সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়কজনপদের স্বেচ্ছাসেবীকর্মীরা কাজ করছেন। যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অতিরিক্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইরোধে নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা।

কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে কোথাও হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তা প্রমানিত হলে তাকে ক্লোজ করা হবে। কোনো প্রকার যানবাহন দাঁড় করে হয়রানি যাবে না। মহাসড়ক এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ তিন চাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কোনো প্রকার সুপারিশযোগ্য নয়। কুমিল্লা অংশে দাউকান্দিসহ একাধিক স্থানে সিসিক্যামারার মাধ্যমে সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোত কিছুটা যানজট রয়েছে। তবে এবার ঈদে নির্বিঘ্নে সকলে বাড়ি ঈদ উদযাপন করতে পারবে মানুষ। কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা টোলপ্লাজায় যদি যানবাহনের জটলা তৈরি হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নানান ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর টোলপ্লাজায় সাধারণ গাড়ির চাপ বাড়লেই যানজট তৈরি হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা রিজিনিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ কুমিল্লার সুনীতি চাকমা, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন, কমিউনিটি পুলিশিং কুমিল্লা রিজিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি, কুমিল্লা জেলা বাস মালিক গ্রুপ কার্যকরী সভাপতি তাজুল ইসলাম, আন্ত জেলা বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক আবুল বাশার, কমিউনিটি পুলিশিং দাউদকান্দির সভাপতি রকিবুল হাসান, ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন মোজাম্মেল চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সহসভাপতি আবুল বাহার প্রমুখ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ,ঈদে ঘরমুখো মানুষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close