আহসান হাবীব সুমন, কচুয়া (চাঁদপুর)

  ২৫ মার্চ, ২০২৪

কচুয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

‘ভিক্ষা করে রাস্তার পাশে ঘরটা করেছিলাম, ঝড়ে সব গেছে’

কচুয়া রবিবারের ঝড়ে লতিফপুর গ্রামের জিলহজ¦ বেগমের ঘরটি রাস্তার পাশে ফেলে। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার একমাত্র বসতঘর বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আমার স্বামী ও কোনো ছেলে সন্তান নেই, আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ভিক্ষা করে রাস্তার পাশে ছোট ঘরটা করেছিলাম, ঝড়ে আমার সবকিছু নিয়ে গেছে। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।বলছিলেন বিধবা জিলহজ্ব বেগম।

রবিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় চাঁদপুরের কচুয়ায় হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট-বড় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ সদর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের গ্রামের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। এ সময় বহু ঘরের চাল ও টিন উড়ে গেছে। শত শত গাছ উপড়ে গেছে, তছনছ হয়ে গেছে ডালা-পালা।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন জানান, মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ঝড় ও তুমল বৃষ্টিতে ৫-৬ কিলোমিটার মধ্যে থাকা ঘর-বাড়ি, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পার্শ্চবর্তী গ্রামগুলোতে বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়। ঝড় বয়ে যাওয়া এলাকায় গাছপালা, বাড়ি-ঘর, মুরগী খামার, টিনসেটের মসজিদ এবং ফসলী জমি ভুট্টা ও বোরধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের জিলহজ¦ বেগম, এমরান হোসেন, হক মিয়া, আলী আহমেদ; লতিফপুর গ্রামের উত্তর-পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, নোয়াগাঁও গ্রামের ওহাবা বেগম, তৈতৈয়া এলাকার সোহরাব হোসেন মেম্বার, কাউছার আলম; জলা তেতৈয়ার অরুণ বৈদ্যের দোকান ঘর, সিংড্ডা, খিড্ডা: সদর দক্ষিণ ইউনিয়ন ধলি কচুয়া, কোমরকাশা, রাজাপুর গ্রামের ব্যাপক বিভিন্ন পরিবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, গত (রবিবার) রাতে হঠাৎ করে গ্রামের ওপর বয়ে যাওয়া ঝড় সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। অনেকেরই ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ফল গাছ ও ফসলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার তৈতৈয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, রাতে কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ বিকট শব্দ হয়, কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায়। ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার পোল্ট্রি ফার্মের ঘর ভেঙে পুকুরে পড়ে অনেক মুরগী মারা গেছে। এতে আমার প্রায় ৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

কচুয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বেলায়াত হোসেন বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যার ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বা কত সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন, তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।’

কচুয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ ঝড়ে ফসলী জমি, বিশেষ করে ভূট্টা ও বোরধানের ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করছে।’

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান বলেন, ‘হঠাৎ ঝড়ে উপজেলার বিশেষ করে ২টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পেয়েছি। ইউপি সদস্যদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চাঁদপুর,আহসান হাবীব সুমন, কচুয়া,কচুয়া
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close