ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
দখল দৌরাত্ম্য
কোটচাঁদপুরের ছয় বাঁওড়ের ২৫ হাজার জেলে বেকার
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহরসহ প্রায় সব বাঁওড়েই প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন সেখানকার জেলেরা। ক্ষমতা আর ইজারা প্রথার প্রভাবে ছয়টি বাঁওড়ের প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। চল্লিশ বছর ধরে একতরফাভাবে বলুহর বাঁওড় নিজেদের মতো ভোগদখল করে সরকারি রাজস্ব লোকসান করছে দখলকারীরা বলে অভিযোগ জেলেদের।
তাদের দুর্নীতি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয় বলুহর বাঁওড়টি মৎস্য বিভাগের কাছে নবায়ন না করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ২০২২ সালের ২০ মার্চ।
প্রভাবশালীদের ইজারা বাতিল করে বাঁওড়ে নিজেদের অধিকারের দাবিতে সংগঠিত হয়েছেন বঞ্চিত জেলেরা। কিন্তু কেউ জেলেদের কথা শুনছে না। জনপ্রতিনিধি থেকে নাগরিক সমাজ কিংবা গণমাধ্যম সকলেই এক্ষেত্রে বিস্ময়করভাবে নিশ্চুপ বলে অভিযোগ তাদের।
এর আগে, জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে গত ২৮ মে ঢাকায় গিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
- বাঁওড়ে নিজেদের অধিকার দাবিতে সংগঠিত বঞ্চিত জেলেরা
- ৫ বাঁওড় পাড়ের মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
- ৪২ বছর ধরে বাঁওড়ে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। বন্ধ হওয়ায় এখন ২৫ হাজার মানুষ বেকার।
- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক
বাঁওড়ই ছিল তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সেটা গত বছরের এপ্রিলে ভূমি মন্ত্রণালয় ইজারা দিয়েছে। জানা যায়, জলমহল ইজারা প্রদানের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধনকৃত ও প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির আবেদনের কথা বলা হলেও এখানে একাধিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মৎস্যজীবী নন এমন ব্যক্তিদের বাঁওড় ইজারা পাইয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ করেছে জেলেরা।
বলুহর বাঁওড় ও মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি গোপাল হালদার বলেন, আমরা বাঁওড় পাড়ের মৎসজীবীরা কর্মহীন হয়ে গেছি। ফতেপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শান্তি হালদার বলেন, আমরা ধারদেনা করে বাঁওড়টি ইজারা নিয়েছি।
জয়দিয়া বাঁওড়ের সাবেক মৎস্যজীবীদের দলপতি নিত্য হালদার বলেন, বাঁওড় ফিরে পেতে ৫ বাঁওড় পাড়ের মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি হাইকোর্টে চুড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছে।
যশোহর বিল বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আলফাজ উদ্দীন শেখ বলেন, এ বাঁওড়গুলো আমাদের আওতায় ৪২ বছর ছিল। বাঁওড়গুলো ভূমি মন্ত্রণালয় ইজারা দিয়েছেন। যে কারণে বাঁওড় পাড়ের জেলেরা তো বেকার হয়েছে।
বলুহর বাঁওড় ইজারা পাওয়া কোটচাঁদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শীতল হালদার বলেন, আমার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কাউকে ইজারা পাইয়ে দেয় নাই বা আমরা বাঁওড় সাব-লিজও দিই নাই।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক বলেই বাঁওড়গুলো পরিচালনা করা হতো। স্মারকের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভূমি মন্ত্রণালয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় আর বাড়ানো হবে না। তারা ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্র অনুযায়ী যারা বাঁওড় ইজারা নিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিতরা একটি স্মারলিপি দিয়েছেন। সেটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
পিডিএস/জেডকে