রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ০২ জুন, ২০২৩

কুষ্টিয়া সুগার মিলের সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ

কেএসএম বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

দুজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান

জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া চিনিকলের উৎপাদনসহ সার্বিক কার্যক্রম বন্ধের সরকারি নির্দেশনার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলা কেএসএম (কুষ্টিয়া সুগার মিল) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমও পড়েছে হুমকির মুখে। প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষক অবসরে গেলেও নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। শিক্ষক সংকটের মধ্যেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

জানা গেছে, ১৯৬২-৬৩ সালে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার জগতি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া সুগার মিল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কেএসএম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম চলে আসছে বেশ সুনামের সঙ্গেই। কিন্তু ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে কুষ্টিয়া চিনিকলসহ দেশের ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব চিনিকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিয়া আক্তার জানায়, স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কোথায় গিয়ে পড়ব। আমাদের স্কুল অনেক ভালো। এখানকার স্যাররাও ভালো। সরকার যেন আমাদের স্কুল বন্ধ না করে। আমরা এখানেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক রাহাতুল ইসলাম জুয়েল জানান, আমার ছেলে মেয়ে এ স্কুলে পড়েছে। পড়ালেখার মান ভালো এবং শিক্ষার পরিবেশ ভালো থাকায় অন্যান্য স্কুলের চেয়ে এ স্কুল অনেক সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু বিষয়টি ভাবতেই অবাক লাগছে আজ এ স্কুল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাসুদ রানা জানান, এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার অনেক অনুভূতি আবেগ জড়িয়ে আছে। এখান থেকে পড়ালেখা করে আজ আমার মতো অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। পড়ালেখার মানও অন্য স্কুলের চেয়ে বেশ ভালো। অথচ আজ এ স্কুলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চিনিকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের ভবিষ্যতও যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তবে আমি চাইব এ প্রতিষ্ঠানটি যেন বন্ধ না হয়।

কেএসএম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুজ্জামান খাজা বলেন, তিনিসহ আরো একজন শিক্ষক রয়েছেন। এ দুজন মিলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা অবসরে গেছেন। বর্তমানে শিক্ষক সংকটের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সুগার মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদেরও মনবল ভেঙে পড়েছে। আমি চাই স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন যদি চালাতে নাও পারে তাহলে সরকারিকরণ করে হলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হোক। সদ্য অবসরে যাওয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার অনেক আবেগ জড়িত। চেষ্টা করেছি সুনামের সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার। কিন্তু সুগার মিলের এমন দৈন্যদশায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। যদিও শুনেছি করপোরেশন স্কুলের পাঠদান অব্যাহত রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া চিনিকলের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন, স্কুলের বিষয়ে এখনো সদর দপ্তরের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে কোন নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ না করে সরকারিকরণ করে হলেও কার্যক্রম অব্যাহত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের নয়, এটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের। কে নো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক বা অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে যাক, এটা আমরা কামনা করি না।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুষ্টিয়া সুগার মিল,কেএসএম বিদ্যালয়,প্রাথমিক বিদ্যালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close