বশির আহম্মদ মোল্লা, নরসিংদী

  ২৮ মে, ২০২৩

ছাত্রদলের দুই নেতা হত্যা, নরসিংদীতে উত্তপ্ত বিএনপির রাজনীতি

বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনকে নরসিংদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রবিবার মানববন্ধন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানসহ দুই ছাত্রদল নেতা হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিএনপির রাজনীতি। হত্যার ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নামে মামলা হয়েছে। এ মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এছাড়াও খায়রুল কবির খোকনকে তার নিজ জেলা নরসিংদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। রবিবার (২৮ মে) দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলা মোড়ের কোর্ট রোডে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মানববন্ধন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

গত ২৫ মে বিকেলে চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম। এ ঘটনায় খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। শুক্রবার (২৬ মে) রাতে নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকে নিহত সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মাইনুদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্য সচিব রিফাতের বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকআপ ভ্যান ও শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভ মিছিলটি জেলখানা মোড় হয়ে চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই দুর্বৃত্তরা ককটেল নিক্ষেপ করেন। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে তার মাথায় গুলি করে। আশরাফুল নামে আরো একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাদেকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিন পর শুক্রবার সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যান।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন। এ ঘটনায় যুবদল সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, কামাল হোসেন ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

এদিকে, খায়রুল কবির খোকনকে নরসিংদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের দুই নেতা সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় খোকনকে দায়ী করছেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, দুই ছাত্রদল নেতাকে হত্যা করা হয়েছে খোকনের নির্দেশে। তাই তাকেসহ সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

তবে খায়রুল কবির খোকন বলেন, জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আমাদের ওপর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ছাত্রদলের দুই নেতা হত্য,নরসিংদী,বিএনপির রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close