মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

  ২৫ মে, ২০২৩

‘শেখ হাসিনা সড়ক’ ঘুচালো হাঁটার কষ্ট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় শেখ হাসিনা সড়কে সেতু। ছবি : মজিবুর রহমান খান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ যানবাহন চলাচলের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলার সিমনা পর্যন্ত সোয়া ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ ঘুচিয়েছে। এখন আর ৩৫ কিলোমিটার ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয় না। এতে তাদের টাকা ও সময় বাঁচে। এ সড়ক শুধু যে শহরের সঙ্গে দূরত্বই কমাবে তা নয়, ভূমিকা রাখবে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতি বিকাশে।

খাল-বিল, নদী-হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ সড়কে ভিড় করেন শতশত মানুষ। আগে মহাসড়ক ধরে সরাইল বা আখাউড়া ঘুরে যেতে হতো ওই উপজেলায়। সময়ও লাগতো দেড়-দু’ঘণ্টা। ঘুরপথে যোগাযোগব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হতো পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে তাদের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে হাঁটা। চলার পথ ছিল কষ্টের।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সিমনা পর্যন্ত প্রায় ৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হলেও এখন কাজ প্রায় শেষ। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা। মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টাতেই হয়েছে হাওরের বুকে পিচঢালা এ পথ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানিয়েছে, শহরসংলগ্ন তিতাস নদীতে ৩১৫ মিটার এবং লইসকা খালে ৩০৮ মিটার দীর্ঘ দুটি সেতু এবং এর সঙ্গে প্রায় ১২শ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সড়ক রক্ষায় পাশে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের ব্লক। এ কাজটি করেছে মেসার্স মোস্তফা কামাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ এলাকার মানুষের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় নির্মিত সড়কটি সর্বক্ষেত্রে এ উপজেলার মানুষের জীবনযাপন ও আয়-রোজগারে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। অতি-লাভের চিন্তা না করে কাজটির স্থায়িত্ব এবং গুণগত মান কীভাবে ভালো হয়, সেদিকেই লক্ষ্য ছিল আমাদের। কারণ ভালো কাজের জন্যে এলাকার মানুষের কাছে আমরাও যাতে স্মরণীয় হয়ে থাকি। সেই মনোভাব নিয়েই ভালো মানের কাজ করা হয়েছে এ সড়কে।’

সড়ক চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিজয়নগরের মানুষ। খুব কম সময়ে শহরে পৌঁছতে পারছেন। পত্তন ইউনিয়নের লক্ষ্মীমোড়া গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান বলেন, ‘আগে উৎপাদিত শাকসবজি শহরের হাটে নিয়ে যেতে কষ্ট হতো। হাওর এলাকা হওয়ায় নৌকায় করে শহরে আসতে আসতে বেলা হয়ে যেত। ফলে সবজির ভালো দাম পাওয়া যেত না না। এখন মাত্র আধা ঘণ্টাতেই পৌঁছাতে পারছেন শহরের হাটে।’ তিনি আরো জানান, ‘শেখ হাসিনা সড়ক আমাদের এ গ্রামীণ এলাকার মানুষের আয় রোজগার বাড়াতে সহায়তা করবে।’

মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, ‘আগে গ্রামের আশপাশে কলেজ না থাকায় মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক পথে যানবাহনে করে মেয়েরাও শহরে গিয়ে ভালো কলেজে পড়তে পারবে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের আম, লিচু, মাল্টা ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকরা যথাসময়ে এসব ফল জেলা শহরে নিয়ে যেতে পারতেন না। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন তারা। এখন ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ দিয়ে তাড়াতাড়ি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কাঁচামাল ও ফল-সবজি অল্প সময়ে শহরে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে তারা লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন এলাকার একাধিক কৃষক ও ফল উৎপাদক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান জানান, ‘সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সড়কের প্রথম অংশের ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটারের কার্পেটিংয়ের কাজ এখন চলছে। বাকি ৪ কিলোমিটারের উন্নয়নের জন্যে প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া সড়কটিতে কিছু পুরোনো ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। সেগুলো মেরামত ও পুনর্নির্মাণের জন্যেও প্রাক্কলনপত্র পাঠানো হয়েছে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেখ হাসিনা সড়ক,হাঁটার কষ্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close