চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামক একটি এনজিওর চেয়ারম্যানসহ পরিচালকরা গ্রাহকদের বিনিয়োগকৃত ১০৫ কোটি টাকা মেরে দিয়ে অস্ত্র মামলার নাটক সাজিয়ে কারাগারে নিরাপদে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে হাজার হাজার গ্রাহক তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৪৬ শাখা অফিস থেকে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটকের নাটক করে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে নিরাপদে জেলহাজতে অবস্থান করছেন এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মাসুদ রানা।

শনিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে নাসিম উদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকায় গড়ে উঠে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামক একটি এনজিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রোরেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ’র কোনো অনুমতি না থাকলেও শুধু সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে ৪৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক মাসুদ রানা কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছু গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকার মুনাফা দিলেও গত ৬ মাস থেকে সব ধরনের লাভসহ বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম জানান, গ্রাহকের টাকায় বিলাসী জীবনযাপন ও নিজ পরিবার আত্মীয়স্বজনের নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেন। গ্রাহকরা তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে এনজিওটির মালিক কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিজেকে রক্ষার জন্য অস্ত্রসহ আটকের নাটক সাজিয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর মধুমতি এনজিওর পরিচালক মাসুদ রানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে।

আরেক ভুক্তভোগী গোমস্তাপুর উপজেলার মোসা. শুকতারা বেগম জানান, গ্রেপ্তারের কিছুদিন আগেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে জেলা সমবায় অফিস।

পরবর্তীতে মাসুদ রানার ভাই ফারুক নিবন্ধনহীন এনজিওটির কার্যক্রমসহ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে মধুমতি টিভি নামে ইউটিউব চ্যানেল অবৈধভাবে চালাতে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভুক্তভোগী তাজকেরা খাতুন বলেন, আমাদের কষ্টের টাকা মেরে দিয়ে অস্ত্র মামলায় জেলে অসুস্থতার ভান করে আরাম আয়েশে রয়েছেন মাসুদ। এনজিওর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ১০ মার্চ শিবগঞ্জে এনজিও মধুমতি থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে কয়েকশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হায়াত জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, এ ঘটনায় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।