হুসাইন মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

হার না মানা জাফর খাঁ 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

চার সদস্যের সাজানো সংসারে হঠাৎ করে কালবৈশাখীর ঝাপটা। জানা ছিলো না এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবে সেই সোনালী স্বপ্ন। বলছিলাম হার না মানা জাফর খাঁ’র কথা। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির সন্তান। বাড়ি তার বড় হিজলী গ্রামে। গরীব চাষী পরিবারের ছেলে তিনি। জীবন পথের গতি পাওয়ার আগেই পরিবারের হাল ধরতে হলো তাকে। যৌবনে পদার্পণ করতে না করতেই বিয়ে দিয়ে দিলেন বাবা।

বিয়ের পরের বছর জন্ম নিলো কন্যা সন্তান। তাকে নিয়ে কত না স্বপ্ন তার। সংসারের চাপে তাকে কাজ নিতে হলো রাজমিস্ত্রীর। চলছে জীবন, জীবনের গতিতে পেছনে রয়েছে সে। এর মধ্যে জন্ম নিলো তার ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুত্রসন্তান মানে পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাওয়া। এরই মধ্যে কর্মচারী থেকে পদোন্নতি হলো তার। হয়ে গেলো মূল মিস্ত্রী। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে মনের মধ্যে আঁকছে কত রঙিন স্বপ্ন। হঠাৎ করেই তার জীবনে ঘনিয়ে এলো অন্ধকার দিন।

প্রতিদিনের মতো এদিনও কাজে গিয়েছিলেন জাফর খাঁ। কাজ সব ঠিকঠাক মতোই চলছিলো হঠাৎ করে দোতলার রেলিং থেকে পড়ে গেলেন তিনি। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। পা দুটো হয়ে গেলো অচল তবে তার হাত দুটো সচল। গ্রামের অনেকেই তাকে ভিক্ষার থালা ধরার পরামর্শ দিলেন কিন্তু তিনি তার বিবেকের কাছে ছিলেন আপোষহীন। কেন আমি ভিক্ষা করবো? দুহাত যেহেতু সচল- এটাকে কাজে লাগাবো। কি করা যায়- এই চিন্তার মধ্যেই তার মাথায় এলো বাদামের ব্যবসার কথা। একটা হুইল চেয়ার কিনে নিয়ে শুরু করলেন বাদাম বিক্রি। বয়স তার এখন প্রায় ৪০ এর কোঠায়। থেমে থাকেনি জীবন যুদ্ধ।

সংসার চালাতে কষ্ট হয়, তবুও তিনি আপোষহীন। এভাবেই কেটে গেছে হার না মানা জাফরের ৬টি বছর। তিনি বলেন, কেউ যদি নিজ থেকে আমাকে সাহায্য করে তাহলে সেটা নিতে রাজি আছি অন্যথায় নয়। মেয়ে এখন তার বিবাহ উপযোগী। মেয়েকে যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহ দেওয়ার জন্য প্রতিদিনই তাকে কিছু না কিছু সঞ্চয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে। মেয়েকে বিবাহ দেওয়া, পঙ্গুত্ব নিয়ে বাকিটা জীবন কাটানো, তিনি কী পারবেন তার বিবেকের কাছে আপোষহীন থাকতে?

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাফর খাঁ,হার না মানা জাফর খাঁ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close