চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৬ মার্চ, ২০২৩

নাচোলের পেয়ারা গেল দুবাইয়ে

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ মাটিতে ফলা সোনার ফসলে স্থানীয় চাহিদা মেটে। এবার সেখানকার উৎপাদিত পেয়ারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে। জেলার নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায় উৎপাদিত ১৫ মেট্রিক টন পেয়ারা বুধবার দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম ঢাকার একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পেয়ারাগুলো দুবাই পাঠাচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রডিউস লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, দুবাইয়ের জনপ্রিয় সুপার শপ লুলু মার্টের সবগুলো শাখায় বিক্রি হবে এই পেয়ারা। লুলু মার্টে সেই পেয়ারা ভিয়েতনাম ও ভারতের পেয়ারার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই নিরাপদ পদ্ধতি অবলম্বন করায় বাংলাদেশি পেয়ারার জনপ্রিয়তা রয়েছে দুবাইয়ের মার্কেটে।

কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগে এ বাগান থেকে ৮ হাজার কেজি পেয়ারা দুবাইয়ে রপ্তানি করা হয়েছে। তখন দেশের বাজারে প্রতিমণ পেয়ারার দর ছিল ১৪০০ টাকা। কিন্তু রপ্তানির জন্য পেয়ারা বিক্রি করেছিলেন ২৩০০ টাকা মণ দরে। দুবাইয়ে আগে থেকে যেসব দেশের পেয়ারার মার্কেট আছে, তাদের চেয়ে আমাদের দেশের পেয়ারার চাহিদা অনেক বেশি। আমাদের দেশের উৎপাদিত পেয়ারার সুমিষ্টতার কারণে দুবাইয়ের নাগরিকরাও এই পেয়ারা খেতে পছন্দ করে। অন্যান্য দেশের পেয়ারার চেয়ে আমাদের দেশের পেয়ারা বেশি দামে বিক্রি হয় দুবাইয়ে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখনও অ্যানালগ পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষাবাদ করি। কিন্তু থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে পেয়ারা চাষ হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। তারা পাকেজিংও করেন মেশিনের সাহায্যে। এরপরেও আমরা আমাদের দেশের পেয়ারাকে ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। আমাদের কৃষকদের যথাযথ ট্রেনিং দিলে, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আমরা অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাবো।

গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রডিউস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) হেমায়েত হোসেন শিপলু বলেন, আমরা যখন একটা বাগান থেকে পেয়ারা নেই, সব কিছু খেয়াল রাখি। পেয়ারাতে কোন দাগ থাকা যাবে না, কোন পোকামাকড় থাকা যাবে না। স্বাদ ও আকার দুটোর দিকেই আমাদের নজর থাকে। দুবাইয়ে চড়া মূল্যে পেয়ারাগুলো বিক্রি করছি। সেখানে আমাদের দেশের পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামিতে সেখানে পেয়ারার দাম আরও বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, আমের পাশাপাশি পেয়ারাও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটা খুবই সম্ভাবনাময়। জেলায় এখন অনেক পেয়ারার বাগান। বিদেশে রপ্তানি করলে নায্য দাম পাবেন বাগান মালিকরা। পেয়ারার প্রসেসিং করা গেলে খুব বেশি পরিমাণে বাগানে নষ্ট হবে না। তাহলে আমরা এই জেলা থেকে আরও পেয়ারা এক্সপোর্ট করতে পারবো।

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, এই উপজেলায় উৎপাদিত ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা বিদেশে যাচ্ছে, এটা খুবই খুশির খবর। আমাদের দেশের পেয়ারা চাষের পদ্ধতি ও কৌশল অনান্য দেশের থেকে একদম আলাদা। সে জন্য আমাদের দেশের পণ্যের মান ও গুণের দিক থেকেও এগিয়ে। বিদেশে আমাদের দেশের সব কৃষিপণ্যের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

চাষিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, ল্যাব টেস্টের বিড়ম্বনার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য আমের জন্য রপ্তানি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। পেয়ারার জন্য নতুন করে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশে ১৪টি অঞ্চলে ল্যাব নির্মাণ করা হবে এবং প্যাকেজিং হাউজ চালু করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাচোল,পেয়ারা,দুবাই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close