কাজী জুবায়ের ইসলাম সোহান, দুমকি (পটুয়াখালী)

  ১৬ মার্চ, ২০২৩

অটো-মিশুক নিয়ে রাস্তায় কিশোর

বই-খাতা ও কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও বাড়তি উপার্জনের লোভে অটো-মিশুক চালানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নেমেছে পটুয়াখালীর দুমকিতে অনেক অবুঝ শিশু-কিশোর। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

বুধবার (১৫ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় সড়কেই শিশু-কিশোর চালকদের সরব উপস্থিতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দুমকি গ্রামের হারুন মৃধার ছেলে জিহাদ (১২), জলিশা গ্রামের বাবুলের ছেলে মনির (১৩), জামলা স্ট্যান্ড এলাকার মামুন (১৪), বাহেরচর গ্রামের সোহেলসহ (১৩) অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। পথচারীদের অভিযোগ, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক চালকরাই অটোরিকশা ও মিশুক চালাতে হিমশিম খায়। সেখানে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভাইয়ের বা চাচার অটো-মিশুক নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। এছাড়াও কিছু মুনাফালোভী অটো-মিশুকের মালিক শিশুদের হাতে অটো-মিশুক তুলে দেন। যারা এই অপ্রাপ্ত বয়সে চালকের আসনে বসছেন, তারা নিজেরা বুঝে উঠতে পারে না আসলেই তাদের জীবনও কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। নেই কোনো ম্যানুয়াল প্রশিক্ষণ, অপরদিকে জানে না ট্রাফিক আইন এবং বিশেষ মুহূর্তে নিতে পারে না উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এছাড়াও রাস্তার মাঝখানে গাড়ি ঘুরানো, যত্রযত পার্কিং ও অদক্ষভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।

অপরদিকে আবার কেউ কেউ মনে করছেন, যেসব শিশু-কিশোর আর্থিক অনটন ও পারিবারিক সমস্যার কারণে অটো-মিশুক চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের পুনর্বাসন, আর্থিক সাহায্য ও উপযোগী কাজের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া লিমন (১৩) নামের একজন কিশোর চালককে জিজ্ঞেস করা হয়, অল্প বয়সে গাড়ি চালাও কেন? জবাবে সে বলে, সবসময় চালাই না। ভাইয়ের গাড়ি। তাই মাঝে মাঝে চালাই। সেও চালায়। অটোচালক মো. রায়হান (১১) অপ্রাপ্ত বয়সে গাড়ি চালানোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বাবা ৯ বছর ধরে অসুস্থ। অর্থ সংকটের কারণে চালাই।

এবাদুল হক নামের এক পথচারী বলেন, কিশোর গাড়িচালক বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার ও বিপজ্জনক। এমনিতেই অটো-মিশুক অবৈধ, সরকারিভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। অটো ও অটোরিকশা শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ১৮ বছরের নিচে যাতে কেউ এসব চালাতে না পারে তার জন্য অবজারভেশন চলমান রয়েছে। আর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই এরা আর রাস্তায় অটো-মিশুক নিয়ে নামতে পারবে না। এ ব্যাপারে মেরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের গাড়ি চালানো নিষেধ। আমার ইউনিয়নে এমন কাউকে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, কোনোভাবেই অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা অতি দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অটো-মিশুক,কিশোর,ঝুঁকিপূর্ণ পেশা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close