আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ

  ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

হবিগঞ্জ-১ আসন (বাহুবল-নবীগঞ্জ)

মাঠে আ.লীগ, জয় পেতে মরিয়া বিএনপি, আসন চায় জাপা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনে এলাকাবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। কারা মনোনয়ন পাবেন- এ নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। এই আসনে সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। তারা ইতিমধ্যেই উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছেন। যেসব কমিটি বাকি রয়েছে সেগুলো দ্রুত সময়ে গঠন করার জন্য তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্থানীয়রা জানান, এক সময়ে বাহুবল-নবীগঞ্জ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এই আসনে তিন যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এর ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০১০ সালে তার মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। যার ফলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তাৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তবে ওই উপ-নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়ার কাছে হেরে যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। যে কারণে আসনটি হারায় আওয়ামী লীগ। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে মিলাদ গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তবে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন মহাজোট মনোনীত প্রার্থী জাপা নেতা এম. এ মুনিম চৌধুরী বাবু। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মিলাদ গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে হারিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘বর্তমানে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে তৃণমূলে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। মিলাদ গাজী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি অত্যান্ত নম্র-ভদ্র, পরহেজগার ও সৎ মানুষ। তার এই সততাকে আগামীতেও মানুষ মূল্যায়ন করবেন। তবে করোনা মহামারী ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উন্নয়নে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের প্রত্যাশা পূরনের পাশাপাশি আসনটি ফের আওয়ামী লীগের দূর্গে পরিণত হবে।

জেলা তাতী লীগের সভাপতি ও পুটিজুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুদ্দত আলী বলেন, ‘বাহুবল-নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী ও সু-সংগঠিত। এই আসনে এমপি মিলাদ গাজী উন্নয়নে অপরিসিম ভূমিকা রাখছেন। তার নেতৃত্বে করাঙ্গী ব্রীজের কাজ চলছে। পূর্বের করাঙ্গী ব্রীজের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকা রেলওয়ে স্ট্রেশনের উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি বাহুবলে কৃষি অফিস, অত্যাধুনিক বাহুবল উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, করাঙ্গী নদী খনন, করাঙ্গী নদীতে ড্রাম নির্মাণ, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসায় ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, সেতু কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তি করেছেন। তিনি উপজলায় সহী কোরআন শিক্ষা চালু করেছেন। আগামীতে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে সৎ মানুষ হিসেবে দল মত নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। এতে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এম. এ মুনিম চৌধুরী বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয় ছিল। তবে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত অবস্থান জাতীয় পার্টি তৈরি করতে পারেনি।

যদিও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলছেন, ‘বর্তমানে এই আসনে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেই। দলটি ক্ষমতায় থাকায় সভা-মিছিলে কিছু নেতা-কর্মীকে দেখা যাচ্ছে। এর বাইরে অবস্থান গড়তে পারেনি আওয়ামী লীগ। মূলত টি. আর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ছোটখাটো কয়েকটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই করতে পারেননি আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মিলাদ গাজী। আশানুস্বরূপ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তিনি পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছেন।’

বাহুবল উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী (তুষার) বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাহুবল উপজেলা বিএনপি ও সকল ইউনিয়ন এবং প্রত্যেকটি ওয়ার্ড কমিটি ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সভা-সমাবেশ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে বিএনপি। ২০১০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ সুজাত এমপি নির্বাচিত হন। এখানে জাতীয় পার্টি কোন্দলে বিভক্ত। মাঠ পর্যায়ে তাদের অবস্থান নেই। বাহুবল-নবীগঞ্জে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এতে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলে আশা করা যায়।’

জাতীয় পার্টির নেতারা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সৃষ্টি লগ্ন থেকেই এই আসনটি লাঙ্গলের ঘাঁটি। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জাপা নেতা খলিলুর রহমান রকি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপা নেতা এম. এ মুনিম চৌধুরী বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধী দলীয় এমপি থেকেও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। এই আসনে জাপা নেতা এম. এ মুনিম চৌধুরীর বিকল্প নেই।’

উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও লামাতাসি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আ.ক.ম উস্তার মিয়া তালুকদার বলেন, ‘প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক এমপি এম. এ মুনিম চৌধুরী বাবুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ। তিনি এমপি থাকাকালীন ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন; এই আসনে তার বিকল্প নেই। তিনি এখানে জাতীয় পার্টিতে সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আগামী নির্বাচনে এম. এ মুনিম চৌধুরীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

তিনি বলেন, ‘গত ৪ বছরে আওয়ামী লীগ তেমন একটা উন্নয়ন করতে পারেনি। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ভালো অবস্থানে থাকলেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক সাবেক এমপি এম. এ মুনিম চৌধুরী বাবু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘কোন্দল ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে ঐক্যবদ্ধভাবে করছে জাতীয় পার্টি। আমি এমপি থাকার সময় ২টি কলেজ, ২টি হাইস্কুল, ১৩৩টি নতুন রাস্তা, ১৩৫টি গ্রাম বিদ্যুতায়ন, ৬০টি ব্রিজ নির্মাণ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের এমপি মিলাদ গাজী তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে আগাম মনোনয়ন দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে করিগরি শিক্ষাসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাহুবল-নবীগঞ্জবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে চাই।

এ ব্যাপারে বর্তমান এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ মিলাদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বাহুবল-নবীগঞ্জবাসী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ৩০ বছর ধরে বন্ধ থাকা রেলওয়ে স্টেশনের কাজ চলমান। বাহুবলে স্পিনিং মিল ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। এতে আড়াই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। শুধু নবীগঞ্জে ৩২টি রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করেছি। করাঙ্গী নদীর উপর ৩টি ব্রিজের ১টির কাজ শেষ হয়েছে, আরেকটির কাজ চলমান। ইতিমধ্যে ১৪টি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা ভবণ নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছি। তাছাড়া এই আসনের সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে একটি গার্মেন্টস করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ২টি টেকনিক্যাল স্কুল ও ১টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ করার ইচ্ছা আছে। তাছাড়া আমি আইসিটি ইউনিভার্সিটি স্থাপন করতে চাই। বিষয়টি আমি শিগগিরই সংসদে উত্থাপন করবো।

তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। আমি চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। ভোটের মাধ্যমে খেলা হবে।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হবিগঞ্জ,বাহুবল-নবীগঞ্জ,আ.লীগ,বিএনপি,জাপা,নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close