রায়হান সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

সূর্যমুখী চাষে স্বাবলম্বী লোহাগাড়ার প্রান্তিক চাষিরা

ছবি : সংগৃহীত

সূর্যের মত মুখ তার, নাম তাই সূর্যমুখী। উজ্জ্বল আভায় রূপ ছড়ানো এই ফুলের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে পারেন। সবুজের মাঠে হলুদের মাঠটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন লোহাগাড়ার প্রান্তিক চাষিরা। বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের রুস্তমের পাড়া এলাকায় বশির আহমদ প্রকাশ বশির বাবুর্চী নামের এক কৃষক প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় সুযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। একজন কৃষকের দেখাদেখি অন্যান্যরাও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের হরিণা বিলে ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। বশিরের মত আরো অনেকে সূর্যমুখী চাষ করছেন জানা গেছে।

চাষি বশির আহমদ বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ফসল কেটে ঘরে তুলতে আরো কিছু টাকা খরচ হবে। পুরো ফসলে সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয় বাগানে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি ভালো ফলন পেয়েছি। এবারের পরে আরো ৫০/১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা আছে। আমি এতে অনেক বেশি খুশি।

আধুনগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি অফিসের উপ-সহকারী টিটু চক্রবর্তী বলেন, কৃষক বশির আহমদের সূর্যমুখী বাগানে ফুল ধরেছে। হলুদের রঙে ভরে গেছে। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আধুনগরের কয়েকজন চাষি সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন।

তিনি আরও জানার, সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফুলের চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হয় বলে শফিক অনেক খুশি। তার চাষাবাদের কারণে অন্যদেরও সূর্যমুখীর চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষিদের রাজস্ব প্রকল্প থেকে ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বীজসহ সার্বিক সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ধরণের সাফল্য। এখন লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বশির আহমদের মত অন্যান্য চাষিও সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে।

তিনি আরও জানান, সূর্যমুখী ফুলের আবাদে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও পরার্মশ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিকেজি সূর্যমুখীর বীজের দাম ২২ টাকা। সুর্যমুখী তেলের দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। এই তেল অনেক পুষ্টিকর এবং অন্য তেলের চেয়ে অনেক ভালো। সূর্যমুখীর বীজে তেল ছাড়াও খৌল হয়, যা দিয়ে মাছের খাবার এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখীর উৎপাদনে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই। প্রান্তিক কৃষকদের আরো সার্বিক সহযোগিতা ও সূর্যমূখী চাষে আগ্রহী করে তুললে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লোহাগাড়া,সূর্যমুখী ফুল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close