আলমগীর হোসেন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

নবীনগরে আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্প

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নূরজাহানপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৫টি ঘরের মধ্যে ৬টি ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ৬টি ঘর কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা এখন বসবাস করছেন। ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তবে তা অস্বীকার করেছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রতি ২ শতক জমি ও প্রতিটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আর বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা এ ঘর বিক্রি করেছে মাত্র ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। ফলে বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা বিক্রি করে দিয়েছেন এসব ঘর। আর এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৯৫টি ঘরের মধ্যে ৩০টি ঘর রয়েছে তালাবদ্ধ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নূরজাহানপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২নং গলির ৩নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত আফছর উদ্দিনের স্ত্রী সাধন নেছা ও তার ছেলে রুবেল। কিন্তু স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ওই ঘরটি ২৫ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন সোহেল মিয়া ও তার স্ত্রী শাহনাজ বেগম।

একই গলির ২নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন গাজী মদন ও স্ত্রী জুলেখা বেগম। কিন্তু এ ঘর ৩৫ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন রহিমা বেগম ও তার স্বামী ইমন মিয়া। ২নং গলির ডান পাশের ৯নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মৃত ফজলুল মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগম। তবে হেনা বেগম থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে ওই ঘরে বসবাস করছেন মৃত হামিদ মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম। একই গলির ডান পাশের ১৭নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ধরাভাঙা গ্রামের হাবিব মিয়া। কিন্তু এ ঘর ২২ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন থোল্লাকান্দি গ্রামের এক ভিক্ষুক নার্গিস বেগম।

বড়িকান্দি গ্রামের ইকবাল হোসেন প্রথম গলির ৯নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সেখানে বসবাস করছেন বড়িকান্দি গ্রামের কালন মিয়ার ছেলে মোক্তার হোসেন ও তার পরিবার। ২ নং গলির বাম পাশের ৯নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন কাসেম স্ত্রী জমেলা বেগম। এ ঘর ৩০ হাজার টাকায় কিনে এখানে বসবাস করছে হক সাহেব ও তার পরিবার।

বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কোনো বাড়িঘর নেই। আবেদন করেও ঘর বরাদ্দ পাইনি। তাই নিরুপায় হয়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনে বসবাস করছি।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এইটা তো আমার কাজ না, এইটা ইউএনও এসিল্যান্ড-এর কাজ। এ বিষয়ে ওনারাই ভালো জানেন। আমি শুধু তালিকা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান বলেন, আমি তো নতুন কিছুদিন হয় নবীনগরে এসেছি। ইউএনও স্যারকে অবগত করে তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেলে ঘর বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নবীনগর ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক জানান, সুবিধাভোগীদের কেউ ইচ্ছে করলেই এই ঘর বিক্রি করতে পারবেন না। যদি কেউ বিক্রি করে থাকেন তাহলে তার বরাদ্ধ বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রির বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আশ্রয়ণ প্রকল্প,নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close