reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

সমলয়ে আশার আলো

ছবি : সংগৃহীত

সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা রোপণে আশার আলো দেখছেন চাষিরা। এতে সময় ও উৎপাদনব্যয় কমে যায়। রেহাই পাওয়া যায় মজুর সংকট থেকে। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভবনা থাকে। টাঙ্গাইল ও বগুড়ার সোনাতলার চাষিরা এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইল : সনাতন পদ্ধতির বিপরীতে প্লাস্টিকের ফ্রেমের ট্রেতে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। এতে ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করে সামান্য জৈব সারের ব্যবহারে খরচ কমে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের ফ্রেমের ট্রেতে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, চারা লাগানো, ফসল মাড়াই ও সবই এক সময়ে একযোগে করা যাবে। উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০-১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়াকে একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে, জমির আল বজায় রেখেও লাভজনকভাবে যন্ত্র ব্যবহার করার কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তারা সমলয়। ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, সময় অপচয়রোধ ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় ‘সমলয়’ চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে এক নতুন দুয়ার খুলছে। এ বছর ৪০ শতক জমিতে সাড়ে চার হাজার ট্রেতে প্রথমবারের মতো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। স্থানীয় ৮০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা হবে।

দেলদুয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রেতে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে ধান কর্তনকালে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধানে সমলয় চাষাবাদ উজ্জল দৃষ্টান্ত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র আরো জানায়, একটি বিশেষ অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রেতে চারা রোপণ করা হয়। ট্রেতে চারা রোপণের যন্ত্রের তিনটি চেম্বর থাকে। প্রথম চেম্বারে ঝুরঝুরে মাটি দেওয়া হয়। মেশিনের মাধ্যমে মাটি সরাসরি পরিমাণ মতো ট্রেতে পড়ে। দ্বিতীয় চেম্বারে অঙ্কুরিত বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজও মেশিনের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে ট্রেতে পড়ে। সর্বশেষ তৃতীয় চেম্বারে আবার ঝুরঝুরে মাটি দেওয়া হয়। সেই মাটিও মেশিনের মাধ্যমে বীজসহ ট্রেতে পড়ে বীজগুলো ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর ট্রেগুলো জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সে জন্য পানি স্প্রে করা হয়। শীতে ট্রে ও চারার যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। চারার উচ্চতা চার ইঞ্চি হলে বা চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়।

ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয়ও কম। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বেশি হয়। একসঙ্গে রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে ও কৃষকরা একসঙ্গে ধান ঘরেও তুলতে পারবেন। এ বছর ৪০ শতক জমিতে সাড়ে ৪ হাজার ট্রেতে প্রথমবারের মতো ৮০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের বারপাখিয়া ব্লকের রমজান আলীসহ অন্য কৃষকরা জানান, বোরো ধান চাষাবাদে প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা করেছি। কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে না। কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করছে।

দেলদুয়ারের সদর ইউনিয়নের বারপাখিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার রাজীবুল হাসান মল্লিক বলেন, কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। যার একটি হচ্ছে সমলয় পদ্ধতি।

দেলদুয়ার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার এস এম রাশেদুল হাসান জানান, প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে জমি ও অপচয়রোধে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের বীজতলা ও চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে এবং কৃষকরা আরো অধিক লাভবান হবেন।

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি অফিসার শোয়েব মাহমুদ জানান, এবার আমরা বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে কৃষকদের মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করাচ্ছি। এর প্রধান উদ্দেশ্য কৃষকদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করা। কেউ চাইলে এটাকে ব্যবসা হিসেবেও করতে পারবেন। কৃষির সকল যন্ত্রের সুবিধা পাওয়ার জন্য ও কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্যই এই সমলয় পদ্ধতি।

সোনাতলা (বগুড়া) : ধানের চারা রোপণে যান্ত্রিকতার সূচনা হয়েছে সোনাতলায়। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে সোনাতলায় পৌর এলাকার বোচারপুকুরে প্রথমবারের মতো রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণের সূচনা করেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সোনাতলা, বগুড়ার আয়োজনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমলয়ে বেরো হাইব্রিড ধান চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সূচনা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, বনানী, বগুড়ার উপপরিচালক মো. মতলুবুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈদা পারভীন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ

সোহরাব হোসেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাসুদ পারভেজ ও রবিউল ইসলাম। সোনাতলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণের সূচনার মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে আরো এগিয়ে গেল সোনাতলা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমলয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close