আহমেদ জামিল, সিলেট

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

সিলেট বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার বেশি চাল উৎপাদনের আশা

আমনের মাঠে কৃষকের হাসি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বোরো ধানের। ফসলের এমন ক্ষয়ক্ষতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষক পরিবার। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন চাষে মাঠে ফেরেন চাষিরা। কৃষকের স্বপ্ন এবার বাঁচিয়েছে সোনালি আমন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমনে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। সিলেট বিভাগের সর্বত্র আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আমন উৎপাদন বেশি হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সিলেট বিভাগীয় কৃষি অফিস জানায়, সিলেট বিভাগের চার জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমি। তবে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমি। এ বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যার পর সিলেটে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলার সব ধান কাটা হয়ে যাবে। সিলেট জেলায় এরই মধ্যে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ টন থাকলেও আশা করছি এবার তা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকদের সহায়তায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ধান কাটার মেশিন ও বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় এ বছর ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ টন। এ জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫০ হাজার ২১৬ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে।

অন্যদিকে সিলেট বিভাগীয় কৃষি অফিস জানায়, বিভাগে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩০ শতাংশের বেশি আমন ধান কাটা হয়েছে। বিভাগে এ দিন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ধান কেটে চাল উৎপাদন করা হয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৬ টন।

মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর আমন চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ টন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমির ধান কেটে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৫ টন চাল উৎপাদন করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর ৮০ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর চাষ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭১ টন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ১২৯ হেক্টর জমির ধান কেটে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৭ টন চাল উৎপাদন করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬ টন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমির ধান কেটে ৬৪ হাজার ৭২৬ টন চাল উৎপাদন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, চলতি বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে, আমন ধানের বাম্পান ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ কপালে থেকেই যাচ্ছে। অনেকে আবার ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকটেও ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

সিলেট সদর উপজেলার ধুপাগুল এলাকার কৃষক সবর আলী জানান, এ বছর কয়েকবার বন্যার পরও জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। আমাদের এলাকার সবার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে; ধান কাটাও শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবার ধান কাটার শ্রমিক কম, তাই জমির ধান উঠাতেও দেরি হচ্ছে। তবে মেশিন দিয়েও চলছে ধান কাটা।

সদরের খাদিমনগর ইউনিয়নের কৃষক ওয়ারিছ মিয়া বলেন, ভয়াবহ বন্যার পরও ধানের যা ফলন হয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু এবার শুধু বন্যা নয় খরাও ছিল। তাই অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি তার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিলেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close