মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ২৩ নভেম্বর, ২০২২

মেহেরপুরে রাতভর লাইন, তবুও মিলছে না চাল আটা!

শীত, মশার কামড় উপেক্ষা করে রাতভর অপেক্ষা চাল আটার জন্য। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মেহেরপুর পৌর এলাকার ওএমএসের ৯টি ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্র আছে। সেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও আটা কিনতে উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে। আর এই ভিড় এড়িয়ে এসব খাদ্যপণ্য কিনতে আগের রাত থেকে লাইনে অপেক্ষা করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এভাবে শীত উপেক্ষা করে রাতভর অপেক্ষা করেও কারো কারো ভাগ্যে জুটছে না চাল আটা। মজুদ শেষ হওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে, খোলা আকাশের নীচে শীতের সারারাত অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে ঠান্ডজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না। মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের মাঝে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করছে। সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার এই পাঁচদিন ওএমএস ডিলার পয়েন্টে সুলভ মূল্যে চাল আটা বিক্রি করা হয়। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলছেন ভোক্তারা। খোলা বাজারে মোটা চালের কেজি ৬০ টাকা। সে চাল খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে ৩০ টাকায় কেনা যায়। অন্যদিকে বাজারে আটার কেজি ৭৫ টাকা। লাইনে ১৮ টাকা কেজি পাওয়া যায়। তাও দুদিন আগে কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন লাইনে কিনতে হচ্ছে ২৪ টাকা কেজি দামে। তাও প্রতি ডিলার চাহিদা অনুযায়ী চাল আটা দিতে পারছে না। ওএমএসর ডিলারদের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন সোমবার সারারাত ঘুরে দেখা গেছে রাত ৯টা থেকে মানুষ অবস্থান নিচ্ছেন চাল আটা পাবার জন্য। যদিও পরের দিন সকাল ৯টায় চাল-আটা দেওয়া শুরুর সময়। রাত ৯টায় মেহেরপুর জেলা শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ফারুক হোসেনের বিক্রয় কেন্দ্রের নিকট দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে একটি গাছের গোড়ায় সিমেন্টের খালি বস্তা পেড়ে খন্ড খন্ড হয়ে শুয়ে বসে আছেন অনেক নারী। রেহেনা খাতুন নামে মধ্য বয়সী এক নারী জানান, ৩ কেজি আটা অথবা ৫ কেজি চালের জন্য তিনি রাতভর অপেক্ষা করবেন। সকাল ৯টায় তাদের চাল আটা দেওয়া হবে। রাত ১২টার মধ্যে শতাধিক নারী চলে আসবেন। সকালে এসে যদি না পাওয়া যায়, তাই তারা রাত থেকেই লাইনে রয়েছেন।

মধ্যরাতে এসে লাইনে জায়গা না পেয়ে অনেকেই খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রে রাত ৩টায় আসেন মাসুরা খাতুন নামের শহরের মাঠ পাড়ার এক মাঝ বয়সী নারী। লম্বা লাইন দেখে ক্ষোভ ঝাড়তে ঝাড়তে তিনি বাড়ি ফিরে যান। ভিড় দেখেও অনেকে থেকে যাচ্ছেন। যদি চাল আটা মেলে এই আশায়।

মেহেরপুর পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার নীলমনি হল সড়কের আক্তারুজ্জামান সুমন। তার বিক্রিয় কেন্দ্রের সামনে সোমবার রাত ৩টায় দেখা যায় প্রায় শ‘খানেক নারী অবস্থান করছেন। শেফালী খাতুন নামের থানা পাড়ার এক নারী জানান, তিনিসহ অনেকেই রাত ১০টার দিকে এসে লাইনে ব্যাগ রেখে বসে আছেন।

শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টুর বিক্রয় কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় গিয়ে দেখা যায়, ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সকলের চোখে মুখে ছিল রাত জাগার ক্লান্তির ছাপ। কেউ কেউ সন্ধ্যা রাত থেকেই লাইনে ছিলেন। সেখান থেকে চাল ও আটা কেনা রূপালী বেগম জানান- তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। রাত ৯টায় তিনি লাইনে দাঁড়ান। যখন তিনি আসেন তখন তার সামনে জনা কুড়ি নারী পুরুষ ছিলেন। তিনি বলেন, সারারাত ঘুমহীন লাইনে থেকে বাসাবাড়িতে কাজ করতে কষ্ট হয়। তিনি আরও জানান- বাজার থেকে ৫ কেজি চাল আর ৫ কেজি আটা কিনতে যে টাকা লাগে তার থেকে ওএমএস কেনায় সাশ্রয় হয় অর্ধেক।

লাইনে থেকেও চাল না পাওয়া এক রিকশাচালক জানান, শুধু শহরের নয়, গ্রাম থেকেও এখানে ওএমএসের চাল-আটা নিতে আসছেন। গত এক মাস থেকে নতুন নতুন মুখের দেখা মিলছে। গ্রাম পর্যায়েও খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু নিম্ন আয়ের নয় মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম শ্রেনির মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। এজন্য ক, খ ও গ শ্রেনির কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতিতে চাল, ডাল, আটা, চিনি দেওয়া উচিত। এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, অনেক পরিবারে অভাব থাকলেও তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএস সুবিধা নিতে পারছে না।

দুই নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু জানান, ‘আমরা ২০০ জনকে দিতে পারি। কিন্তু মানুষ আসেন তিন’শর বেশি। সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্ধ পাওয়া যায় ৫ কেজি করে ১১১ জনকে দেওয়া যায়। আটার চাহিদা বেশি। এ কারনে ৫ কেজির স্থলে ৩ কেজি করে ১৮৫ জনের কাছে বিক্রি করা হয়। এক মাস ধরে অনেক নতুন মানুষ আসছেন। যারা কখনও চালের জন্য শহরে আসেননি। এই কারণেই অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েও চাল আটা পাচ্ছেন না।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাতভর লাইন,মিলছে না চাল আটা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close