বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

স্বনির্ভর এনজিওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

পটুয়াখালীর বাউফলে বেসরকারি সংস্থা স্বনির্ভর বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক বাউফল শাখার দেয়া লোনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে পথে বসেছে অর্ধশত পরিবার। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করলেও কয়েকবছর বছর পর নতুন করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ভয় দেখানো হচ্ছে হতদরিদ্র ওই পরিবারগুলোকে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের হোসনাবাদ কেন্দ্রে লোন বিতরণের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে অগ্রণী ব্যাংকের বাউফল শাখা স্বনির্ভর বাংলাদেশ এনজিওকে লোনের জন্য অর্থায়ন করে। এই অর্থ দিয়ে স্বনির্ভরের ক্ষুদ্র লোন দেয়ার কথা ছিল অসহায় শতাধিক পরিবারকে। সেই পরিবারগুলো লোনের টাকা সম্পূর্ণ হাতে না পেলেও দলিল দস্তাবেজে লোনের সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলনের প্রমাণ মিলেছে। উপকারভোগীদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করা হলেও জমা পড়েনি ব্যাংকে। গ্রাহকদের স্বাক্ষর ছবি জাল করে ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলনের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে স্বনির্ভর কর্মসূচির দুই কর্মচারী ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও নেয়া যাচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা। সম্প্রতি সেই লোন পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংক বাউফল শাখা চাপ প্রয়োগ করলে বিপাকে পড়ে যায় মানবেতর জীবনযাপন করা অসহায় পরিবারগুলো।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বনির্ভরের তৎকালীন মাঠকর্মী নাজমা বেগম তাদের সদস্য করেন এবং লোন দেয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোলিপি ও ছবি জমা নেয়। কিছুদিন বাদে ওই ব্যাংকের নিচে আসতে বলেন এবং সেখানে তাদের স্বাক্ষর রেখে পাঠিয়ে দেন। প্রথমবারে স্বল্পসংখ্যক সদস্য একবার লোন পেয়ে পরিশোধ করলেও দ্বিতীয়বার পুনরায় তাদের নামে লোন নেয়া হয়েছে বলে ব্যাংকের কাগজপত্রে প্রমাণ মেলে। কিন্তু লোন গ্রহীতাদের অভিযোগ, দ্বিতীয়বারে তারা কোনো লোন আনেননি এবং প্রথমবারের লোন পরিশোধ করার পরে মাঠকর্মী লোনের পাশ বইও জমা নিয়ে যায়। ঘটনার দীর্ঘ বছর পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে চাপ সৃষ্টি করলে তারা জানতে পারেন তাদের নামে পুনরায় লোন আনা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ সদস্যকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে সদস্য করা হয়েছে। সদস্যের তালিকায় নাম রয়েছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও। যাদের অধিকাংশের নামের সঙ্গে ছবি ও স্বাক্ষরের মিল নেই। ভুক্তভোগী মদনপুরা ইউপির রওশনআরাকে সদর ইউপির হোসনাবাদ কেন্দ্রে সদস্য করা হয়। তিনি জানান, মাঠকর্মী নাজমা বেগম তাকে সদস্য করার কথা বলেন এবং লোন দেয়ার আশ^াস দেন। এরপর তার থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নেন। এর কিছুদিন পরে নাজমা বেগম তাকে বাউফল অগ্রণী ব্যাংকের নিচে ডাকেন। সেখানে গেলে একটি স্বাক্ষর রেখে অপেক্ষা করতে বলেন। সকাল গড়িয়ে বিকেল হলে তাদের বলেন চলে যেতে, কাজ হবে না। এর কয়েকবছর পরে কিছুদিন আগে তিনি জানতে পারেন ব্যাংক টাকা পাবে তার কাছে। তাও আবার যে টাকা তিনি নেননি সেই টাকার পরিমাণের সুদে আসলে তিনগুণ অর্থাৎ ৩০ থেকে ৮০ হাজার দিতে হবে বলে দাবি করছে অগ্রণী ব্যাংক। দীর্ঘ সময় লোন পরিশোধ না করায় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সুদ যোগ হয়েছে।

মদনপুরা ইউপির লিপি বেগম জানান, আমার নামে ১০ হাজার টাকার লোন দেখানো হয়েছে। কিন্তু লোনের বিষয় কোনো কিছু না জানলেও ব্যাংক এখন আমার কাছে তিনগুন টাকা দাবি করছে। এ বিষয়ে স্বনির্ভরে দায়িত্বরত নাজমা বেগম জানান, এসব ঘটনার বিষয়ে আমি (নাজমা) কিছু জানি না। অফিসের আদেশে আমি কাজ করছি। অগ্রণী ব্যাংক বাউফল শাখা ব্যবস্থাপক আরিফ রশিদ জানান, স্বনির্ভরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে লোন দেয়া হয়েছিল; আমরা শুধু সরকারের নির্দেশ মতো কাজ পরিচালনা করেছি। তবে সারাদেশেই স্বনির্ভর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পটুয়াখালী,বাউফল,স্বনির্ভর,এনজিও,মদনপুরা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close