মোঃ শাহ আলম, খুলনা

  ১৪ আগস্ট, ২০২২

খুলনা বিজেএমসি কার্যালয়ে কর্মরতদের অলস সময় 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নগরীর খালিশপুরস্থ চরের হাটে অবস্থিত বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়টি (জোনাল অফিস) বর্তমানে হরিলুটের নিরাপদ আঁখড়ায় পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ থাকায় দাপ্তরিক তেমন কোন কাজ না থাকায় এখানে কর্মরতরা এক প্রকার ‘অলস’ সময় পার করছেন।

এখানকার অফিস প্রধান থেকে শুরু করে নিরাপত্তা প্রহরী পর্যন্ত সকলেই লুটপাটে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। লুটপাট ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে সবাই একজোট, কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ। মোটামুটি ভাগ-বাটোয়ারা করেই চলছে হরিলুট।

একদিকে অফিস চত্বরে চলছে গরু-ছাগল পালন ও মৎস্য চাষ। অন্যদিকে, অফিস চত্বরের কয়েকশত গাছের ফল-ফলাদিও খেয়ে সাবাড় করছেন সংশ্লিষ্টরা। রয়েছে বিদ্যুৎ চুরির কারবারও। এমনকি খাবার হিসেবে কাঁঠাল ও লেবু গাছের পাতা গরু-ছাগলের পেটে যাওয়ায় অনেক গাছ মরতে বসেছে। অফিস ভবনের মধ্যেই ছাগলের বিচরণ দেখা গেছে। কিন্তু বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কোন ধরণের তদারকি বা নজরদারি নেই।

স্থানীয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজেএমসি খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয় চত্বরে রয়েছে বিশাল বাগান। যেখানে দেড় শতাধিক নারকেল, আম ও কাঠাল গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রতি বছর মোটা অংকের ফল-ফলাদি বিক্রি হয়। যার অর্থের অধিকাংশই যায় কর্তাব্যক্তির পকেটে। অথচ এ চত্বরে অবস্থিত মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের সম্মানি জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে বন বিভাগের পক্ষ থেকেও অফিস চত্বরে কাগজী লেবু গাছের প্রায় ৩শ’ চারা রোপন করা হয়। যা ইতিমধ্যেই মহাব্যবস্থাপকের ছাগলের পেটে গেছে। এছাড়া ছাগলকে পাতা খাওয়ানোর জন্য কাঁঠাল গাছের ডাল কেটে ফেলায় বেশ কয়েকটি গাছও মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই।

এখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বর্তমানে সিকিউরিটি ইনচার্জ) সুলতানা পারভীন লাভলী বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য থাকায় অফিসের অনেক খবর তার জানা নেই। আর অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন জিএম স্যারের স্ত্রী তানজিলা বেগম।

অফিস চত্বরে গরু-ছাগল পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, সব জিএমই তো পালন করেন। কিন্তু এর কোন অফিসিয়াল বিধি-নিষেধ আছে কি-না, তা তিনি জানেন না। তবে, অফিস চত্বরে ৩শ’ তো দূরের কথা, বর্তমানে ৩০টি লেবু গাছও নেই বলে তথ্য দেন তিনি।

অপরদিকে, সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডল অফিস চত্বরেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি অফিসের বিদ্যুৎ লাইন অবৈধভাবে টেনে নিয়ে ব্যবহার করছেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর শোকজ করা হয় তাকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এরপরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে সাফাই গেয়েছেন অফিস প্রধান (জিএম) গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডলকে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সে আলাদা লাইন ব্যবহার করে বলেও জানান তিনি।

গাছের ফল-ফলাদির বিষয়ে জিএম গোলাম রব্বানী বলেন, কিছু অফিসের ওয়েলফেয়ার ফান্ডে রাখা হয়। আর কিছু কর্মকর্তা ও অফিস স্টাফদের ভাগ করে দেওয়া হয়। যা আগে দেওয়া হতো না। তবে এখন সবাইকে ভাগ দেওয়া হয় বলেই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে- পাল্টা এ অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডলের সঙ্গে কথা বলার জন্য শনিবার দুপুরে সেলফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন অফ করে রাখেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খুলনা,বিজেএমসি কার্যালয়ে,কর্মরতদের অলস সময়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close