আহমেদ রেজওয়ান, ফেনী
ফেনীতে ট্রেন থেকে প্রতিদিন চুরি ৩২০০ লিটার তেল
ফেনীতে প্রতিদিন ট্রেন থেকে চুরি হচ্ছে প্রায় ৩২০০ লিটার তেল। ট্রেনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় এ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুমোদিত কিছু স্টেশন ছাড়া অন্য কোথাও থামার নিয়ম না থাকলেও ফেনীর শর্শদী স্টেশনে ১০-১৫ মিনিট থামছে পণ্যবাহী ট্রেন। এসব ট্রেন থেকে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন সরাচ্ছে প্রায় তিন হাজার লিটার তেল। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। মাসিক হিসাবে যার দাম দাঁড়ায় প্রায় ৭২ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্শদী স্টেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, তেল চুরির বিষয়টি পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিত আকারেও তারা জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৮টি মালবাহী ট্রেন ছেড়ে যায়। যাওয়ার আগে প্রতিটি ট্রেনে তেল ভর্তি করা হয়। ট্রেনের গার্ড-চালক ও সিজিপিওয়াই-এর কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে অনেক ট্রেনে বাড়তি তেল ভরা হয়। তারপর শর্শদী স্টেশনের আউটার সিগন্যালের মূল পয়েন্টে থামার পরপরই ট্রেনের ইঞ্জিনে পাইপ লাগিয়ে ড্রামে করে তেল চুরি করে এই চক্রের সদস্যরা। একটি ট্রেন থেকে কম হলেও দুই ড্রাম বা ৪০০ লিটার তেল সরানো হয়।
একটি ট্রেনের ইঞ্জিনে তিন হাজার লিটার পর্যন্ত তেল নেওয়া যায়। সে হিসাবে ৮টি ট্রেন থেকে প্রতিদিন তিন হাজার ২০০ লিটার বা দুই লাখ ৫৬ হাজার টাকার তেল চুরি করা হচ্ছে। যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ লাখ টাকা। এ কারণে রেলওয়ে লোকসান থেকে বের হতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
স্থানীয় তিনজন প্রভাবশালী তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কিছু করতেও পারছেন না।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অভিযান চালিয়ে ট্রেন থেকে তেল চুরির সত্যতা পেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮০০ লিটার তেল চুরির প্রমাণ পায় দুদক। তারপরই আরএনবির এক সদস্য ও রেলের কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। চুরিতে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে জানিয়েছিলেন অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক।
শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে ফেনীতে রেলের ১৫শ লিটার চোরাই তেলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চোরের দল যত প্রভাবশালীই হোক তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, শনিবার চুরি হওয়া মালবাহী রেলের সংশ্লিষ্ট চালককে শনাক্ত ও গ্রেফতারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফিরোজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা বিষয়টির খবর নিচ্ছি। যত প্রভাবশালী হোক সত্যতা পেলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।