reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ আগস্ট, ২০২২

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা

ফাইল ছবি

ভরা শ্রাবণে বৃষ্টির জন্য পটুয়াখালীর রাঙ্গাবলীতে ‘ইস্তিসকার নামাজ’ আদায় করেছেন মুসল্লি ও চাষিরা। অপরদিকে জলাশয়ে পানির অভাবে পুকুরভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের চাষীরা। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানায়, শ্রাবণের মাঝামাঝিতেও বৃষ্টি নেই। অনাবৃষ্টি ও দাবদাহ সর্বত্র। ভরা শ্রাবণে টানা খরায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়েছে। ফসলি জমি শুকিয়ে গেছে। আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাষিরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। এ কারণে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে বৃষ্টি চেয়ে ইস্তিসকার নামাজ ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকাল ৮ টায় উপজেলার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এই নামাজ আদায় করেন চাষি ও সাধারণ মুসল্লিরা। বিশেষ এ নামাজ এবং মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সুলতানুর রহমান। বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইস্তিসকার নামাজে তিন শতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়।

নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠ-ঘাট কৃষি জমি। খরায় ফলস উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এজন্য তারা সালাতুল ইস্তিসকার নামাজে অংশ নেন।

মোনাজাত পরিচালনাকারী মাওলানা সুলতানুর রহমান জানান, অনাবৃষ্টির দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই নামাজ আদায় করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২৮ হাজার ২৭৮ হেক্টর।

মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, ভরা শ্রাবণে বৃষ্টি না হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণে পাট চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। জলাশয়ে পানি না থাকায় জাগ দিতে না পেরে জমিতেই পাট ফেলে রাখছেন। কেউ গাড়ি ভাড়া করে দূরবর্তী জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পুকুর ভাড়া করে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে প্রতি বিঘায় ১০০০-১৫০০ টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পানির অভাব রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আর কৃষকরা বলছেন, রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ অঞ্চলে প্রচুর খাসপুকুর রয়েছে। ওই পুকুরগুলো পাট জাগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর থেকে বাজারে কাঁচা পাটের দাম বেশ ভালো যাচ্ছে। বাড়তি দাম পেলেও জাগ দেওয়া নিয়ে পাট চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এছাড়া প্রতি বছর পাটের দামের অস্বাভাবিক ওঠা-নামায় অনেক সময় কৃষকদের লোকসানের কবলে পড়তে হয়। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন।

বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ভান্ডারপুর গ্রামের পাট চাষি স্বপন কুমার জানান, আগের বছরগুলোতে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করলেও এবার পানি সঙ্কটে এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। কিন্তু কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় পড়েছেন চরম বিপাকে। গাড়ি ভাড়া করে দূরবর্তী নিচু এলাকার জলাশয়ে পাট নিয়ে গিয়ে জাগ দিতে হয়েছে। এতে তার অতিরিক্ত প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

একই গ্রামের কামাল জোয়াদ্দার বলেন, পাটের রঙের ওপর দাম নির্ভর করে। পানির অভাবে এবার রঙ ভালো হবে না। তিনি আরও বলেন, পাটের জমিতে ধান ভালো হয়। পাট চাষ করে লাভ না হলেও লোকসান হয় না। পাট কাঠিও কাজে লাগে। বলা যায় পাটকাঠিই কৃষকের লাভ। একই কথা বলেন আরও ২০-২৫ জন কৃষক।

রাজশাহীর বাঘার হামিদকুড়া গ্রামের পাট চাষি রুবেন হোসেন জানান, আড়ানী পৌরসভার জোতরঘু গ্রামের মন্টু হোসেন নামের এক ব্যক্তি সেচ দিয়ে পাট জাগ দেয়ার জন্য পুকুর প্রস্তুত করেছেন। এক বিঘা জমির পাট জাগ দিয়ে পুকুর মালিককে দিতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এলাকার অনেকেই পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিচ্ছেন।

পদ্মার কালিদাসখালী চরের আশরাফুল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড খরতাপের কারণে পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে গেছে। জমির বেশির ভাগ পাটগাছ মরে যাচ্ছে।

পাট অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কৃষি ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা ও পানি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক সংলাপে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে পানি বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজল বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচুর খাসপুকুর রয়েছে। সেগুলো সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ নেই। এসব পুকুর প্রভাবশালীরা ইজারা নিয়েছেন। তারা সেখানে মাছ চাষ করছেন। পাট জাগ দেওয়ার জন্য কৃষক পানি পাচ্ছে না। ওই পুকুরগুলো কৃষকের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বৃষ্টি,প্রার্থনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close