বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় বানভাসিদের মাঝে দুর্ভোগ বাড়ছে।
যমুনা নদীর পানি বুধবার (২২ জুন) আরও এক দফা বেড়ে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে।
জানা যায়, গত ১৭ জুন সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার এবং বাঙালি নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর বুধবার যমুনা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার বেড়ে ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে আরও ১০ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৪৬৫টি হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে পাট ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর, আউশ ৫৯০ হেক্টর, ভুট্টা, ধৈঞ্চা ও বিভিন্ন প্রকার সবজির ক্ষেত রয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যায় ১০ হাজার ২৫০ টি টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। ১ লাখ ১০ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দী হয়েছে। পশুখাদ্য তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে গবাদিপশুগুলো। পানিতে আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়েছে ৫৫০টি বাড়ীঘর। ডুবে গেছে উপজেলার ৬৮ টি কাঁচারাস্তা, ৩ টি পাকারাস্তা এবং ৯ টি ব্রিজ। ৩১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ডুবে গেছে।
এ ছাড়া ২ হাজার ৪৬৯ হেক্টর কৃষিজমির ফসল এখন পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে পাট ২ হাজার হেক্টর, আউশ ধান ৪৫০ হেক্টর, ভুট্টা ৪ হেক্টর এবং সবজি ১৫ হেক্টর।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এ মুহূর্তে যমুনা নদীতে পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং বাঙালি নদীর পানি ৩.৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ৩ ইউনিয়ন তেকানী চুকাইনগর, পাকুল্লা ও মধুপুর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৪৩ হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৫ হাজার ২শ পরিবারের ২০ হাজার ১শ ২৮ জন মানুষ। বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা এবং একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন ও থানা অফিসার ইনচার্জ জালাল উদ্দীন।
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন জানান, ‘বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ চালগুলো আমরা বন্যা উপদ্রুত ৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিকট হস্তান্তর করেছি। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের ভিকনের পাড়ায় একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে আছি।
বগুড়া জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, ৩৩ হাজার পরিবারের ৭৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
মঙ্গলবার বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক নিজে বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন। এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অব্যাহত থাকবে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।