reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল, ২০২২

স্বীকৃত ডিগ্রি নেই তবু তারা দন্ত চিকিৎসক, কলাপাড়ায় ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যসেবা

জহিরুল ইসলাম, কলাপাড়া, পটুয়াখালী 

পড়াশোনার দৌড় সর্বোচ্চ উচ্চমাধ্যমিক হলেও তারা নামের আগে ডাক্তার অথবা ডেন্টিস্ট এবং নামের পরে নানা ‘ডিগ্রি’ লিখেন। যেমন, ডিডিটি, এফটিসি, ডিএমএফ, ডিএমটি ইত্যাদি। অথচ বিএমডিসি আইন অনুযায়ী বিডিএস পাশ ছাড়া এরা সবাই কোয়াক বা হাতুড়ে দন্ত চিকিৎসক।

পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলায় এমন চিকিৎসক আছেন প্রায় ডজনখানেক ।

এই যেমন ‘ডা. হারুন-অর -রশীদ, ডি.ডি.টি (ঢাকা), বিএসসি ইন ডেন্টাল ট্রেনিং ইন ইন্ডিয়া, চেম্বারঃ এশিয়া ডেন্টাল কেয়ার, সদর রোড, মহিপুর, পটুয়াখালী।

ডাঃ আব্দুল হাকিম, ডি.এম. এফ (ঢাকা), ডি.ডি.টি, এফ. টি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, চেম্বারঃ দন্তসেবা।

ডেন্টিস্ট মোঃ রেজাউল করিম, বিএসসি ইন ডেন্টাল (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), ডি.এম.টি ডেন্টাল, এফ.টি.সি (ডেন্টাল সার্জারী এন্ড প্রস্থেসিস), শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল৷ চেম্বারঃ লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কলাপাড়া।

এসব তথ্য চিকিৎসকের ভিজিটিং কার্ড এবং সাইনবোর্ড থেকে পাওয়া। প্রকৃতপক্ষে এদের নামের শেষে লেখা কোনোটিই ডিগ্রি নয়। কিন্তু এগুলো দেখে সাধারণ মানুষ তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে মনে করেন।

প্রায় একই ধরনের ‘ডিগ্রি’ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে কলাপাড়া মাছবাজার এলাকায় ডেন্টিস্ট সুবাষ, ( শীলা ডেন্টাল কেয়ার), গৌতম (তন্ময় ডেন্টাল) এবং রফিকুল ইসলাম, (জননী ডেন্টাল) নামের এসব হাতুড়ে চেম্বার খুলে দন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সূত্রে জানা যায়, বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তির অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং বিএমডিসি স্বীকৃত ছাড়া কোনো পদবী ব্যবহার নিষিদ্ধ। অননুমোদিতভাবে কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না।’ ২২(২) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে তিন বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিএমডিসির আইনের ২৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার নয়। হাতুড়ে ডাক্তাররা অপকৌশলের আশ্রয় হিসেবে ডেন্টিস্ট ব্যবহার করছেন। সারা পৃথিবীতে ডেন্টাল সার্জারীতে যারা গ্রাজুয়েশন করে থাকে তাদেরকে ডেন্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আমাদের দেশে বলা হয় বিডিএস।

ডা. হুমায়ুন কবীর আরো জানান, হাতুড়ে দন্ত চিকিৎসকরা নামের আগে ডেন্টিস্ট এবং নামের শেষে ডিডিটি, এফটি ইত্যাদি টাইপ লিখে আরো বেশি অপরাধ করছেন। মানুষকে বিভ্রান্তি করার জন্য নামের শেষে এ বি সি ডি টাইপ ডিগ্রি ব্যবহার করছেন।

ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে সিংহভাগ মুখের ক্যান্সার হচ্ছে হাতুড়ে চিকিৎসার জন্য। মুখ ও দাঁতের অপচিকিৎসা প্রতিরোধের জন্য সরকার আইন করে প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: তাঁরা এই আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ প্রদর্শন করছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই কলাপাড়া বেড়াতে আসা জয়নব বেগম (৫৫) দাঁতের চিকিৎসার জন্য হাতুড়ে দন্ত চিকিৎসক হাকিমের চেম্বার 'দন্ত সেবায়' আসেন। জয়নবের নীচের দুটি দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। চিকিৎসক হাকিম কোনো পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া ২ টির বিপরীতে ৪ টি দাঁত তুলে ফেলেন। পরবর্তীতে ইনফেকশন হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে তিনি কলাপাড়া হাসপাতালের সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা. ইশরাত জাহান কে দেখান। যোগাযোগ করা হলে ডা. ইশরাত জানান, জনৈক চিকিৎসক সঠিক রোগ নির্নয় না করে ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন। এটা মারাত্মক অন্যায় করেছেন। রোগীর গুরুতর অবস্থা দেখে বরিশালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ কবির হাসান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বিএমডিসির স্বীকৃতি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। যারা নামের আগে ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট ব্যবহার করছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দন্তচিকিৎসক,হাতুড়ে,স্বাস্থ্যসেবা,ঝুঁকি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close