জুলফিকার আলী, কলারোয়া (সাতক্ষীরা)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

১০০ বছরের ঐতিহ্য কলারোয়া খেজুর গুড়ের হাট

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খোরদো বাজারে জমে উঠেছে খেজুরের গুড় ও পাটালি বেচাকেনার হাট। শত বছরের প্রাচীন যুগ থেকে এই বাজার গুড়ের হাট নামে পরিচিত লাভ করেছে। শীত মৌসুমে খেজুরে গুড় ও পাটালি আসা শুরু হয় এখানে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুড় ব্যাপারিরা এসে গুড় কেনার আগাম ঘরভাড়া নেয়। সেজন্য শীত মৌসুম এলেই দেখা যায়, খেজুর গাছের গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। খেজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস আহরণ, তারপর সেই রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন এ জনপদের মানুষেরা। গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য তারা রস আগুনে জ্বালিয়ে তৈরি করেন গুড় ও তা থেকে পাটালি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে গুড় ও পাটালি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

কলারোয়া উপজেলার খোরদো বাজারের খোরদো-চাকলা ব্রিজসংলগ্ন গুড়ের হাট সপ্তাহে দু’দিন বৃহস্পতিবার ও রবিবার বসে। কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁষা খোরদো বাজারস্থ ব্রিজের মুখ সংলগ্ন রাস্তার ধারে এ হাট সত্যিই চোখে পড়ার মতো। শীতের মৌসুমে কলারোয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান এ খেজুর গুড়ের হাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে বলে অনেকে জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, কলারোয়ার খেজুরের রসের রয়েছে আলাদা খ্যাতি। সেই খেজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় গুড় ও পাটালি। উপজেলার খোরদো বাজারে খেজুর গুড় ও পাটালির হাটে গুড় ও পাটালি বিক্রি করতে আসেন পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার মনিরামপুর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রামের খেজুর গাছের গাছিরা।

গুড় বিক্রি করতে আসা দেয়াড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান ও জব্বার সানা নামের খেজুর গাছি জানান, এখন তো আগের মতো গাছ নেই। বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ। তাই রস এখন কম সংগ্রহ করা হয়, যা সংগ্রহ করতে পারি তাতে খরচটা কোনো রকম বেঁচে থাকে। তারপর বর্তমান বাজারে এক ভার গুড়ের দামও কম পাওয়া যায়। যেটা কষ্ট এবং জ্বালানি খরচ হিসেবে তুলনামূলক কম।

একইভাবে মনিরামপুরের চাকলা গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, ব্যাপারিরা গুড়ের দাম কম বলে। যে দাম বলে, সেই দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরে থাক, কষ্টের মূল্যও হবে না।

অপরদিকে, হাটে আসা ব্যাপারিরা দাবি করেন, গাছিরা তাদের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, গত বারের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম অনেক বেশি।

গুড় ব্যাপারি হুমায়ুন কবির জানান, এবছর গুড়ের দাম বেশি। গত বছর যে গুড়ের ভার ছিল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, এ বছর সেই গুড়ের ভার সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯শ’ এমনকি এক হাজার’ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এ গুড়ের হাট থেকে ব্যাপারিরা ভারভর্তি গুড় কিনে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে চলে যান এবং প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে বা বিভিন্ন উপায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলাগুলোর পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশাল জেলা থেকে ২-৩ জন ও কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা একদল গুড় ব্যাপারি প্রতিনিয়ত খোরদো বাজারের গুড়ের হাট থেকে পাইকারি দরে গুড় ও পাটালি কিনে অন্যত্র বিক্রি করে থাকেন।

এদিকে স্থানীয় গুড় ব্যবসাযীরা বলেন, খোরদো বাজারের খেজুর গুড়ের হাট থেকে গুড় কিনে ড্রাম ভর্তি করে গোডাউনে স্টক করেও রাখেন অনেক ব্যবসায়ী। পরে শীত মৌসুম চলে গেলে সেই গুড় ও পাটালি চড়া দামে বিক্রি করেন তারা। সবমিলিয়ে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে এখানকার খেজুরের গুড় ও পাটালির হাট।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাতক্ষীরা,কলারোয়া,খেজুর গুড়,পাটালি,বাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close