তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২২

সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস : শত বছরেও নির্মিত হয়নি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

ফাইল ছবি

আজ (২৭ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস। ১৯২২ সালের এ দিনে তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সলঙ্গার হাটে বিলেতি পণ্য বর্জন আন্দোলনে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কর্মীসহ সাধারণ জনতা শহীদ হন। বৃটিশ শাসনামলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু করেছিল। এমনি এক আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পরে সলঙ্গায়। সে সময় তৎকালীন পাবনা জেলার এবং বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গায় একটি ব্যবসায়িক জনপদ হিসেবে সপ্তাহে ২ দিন হাট বসত। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল বড় হাটবার। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে নামে বিলেতি পণ্য কেনাবেচা বন্ধ করতে। আর সেই স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসে পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরএন দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রসাশক এস কে সিনহাসহ ৪০জন সশস্ত্র লাল পাগড়িওয়ালা পুলিশ। সলঙ্গার গো হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশি কর্মীদের অফিস। পুলিশ কংগ্রেস অফিস ঘেরাওপূর্বক গ্রেপ্তার করে মাওলানা আব্দুর রশিদকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্ত করতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিদ্রোহে ফেটে পরে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। জনতার সেই আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। চারদিকে শুরু হয়ে যায় বুলেট বৃষ্টি। ৪০টি রাইফেলের মধ্যে মাত্র ১টি রাইফেল থেকে কোনো গুলি বের হয়নি। এ রাইফেলটি ছিল একজন ব্রাহ্মণ পুলিশের। হত্যাকাণ্ডে হতাহতের সরকারি সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার দেখানো হলেও বেসরকারি মতে, ১০ হাজারেরও অধিক বলে জানা যায়।

দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতি বছর মাওলানা আব্দুর তর্কবাগীশ পাঠাগার ও সলঙ্গা সমাজকল্যাণ সমিতি ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেন, কিন্তু করোনার প্রভাব বৃদ্ধির জন্য এ বছর ১ দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারি বেগম নূরুন নাহার তর্কবাগীশ অনার্স কলেজ, তর্কবাগীশ মহিলা মাদ্রাসা, তর্কবাগীশ উচ্চ বিদ্যালয়, বিদ্রোহী সলঙ্গা ও সলঙ্গা ফোরাম পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা সভা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, র‌্যালী ও পুরস্কার বিতরণ সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিকে ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদদের স্মরণে সলঙ্গায় নির্মাণ হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। ২০০৬ সালে স্থানীয় এমপি আব্দুল মান্নান তালুকদারের প্রচেষ্টায় ফলক উন্মোচন করা হলেও নির্মাণ হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। গত প্রায় ২ বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, লাইব্রেরি ও রির্সাচ সেন্টার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তারও কোনো বাস্তবায়ন নেই। দিবসটি সরকারিভাবে পালনের জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সেই শহীদদের স্মরণ করা হয়।

সলঙ্গা মাওলানা আব্দুর তর্কবাগীশ পাঠাগার ও সলঙ্গা সমাজকল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি গজেন্দ্রনাথ মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান নান্নু জানান, সলঙ্গা বিদ্রোহের স্থানটিতে শহীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে পাস হয়েছে শুনেছি। স্থানও নির্বারণ করা হয়েছিল, কিন্তু অবৈধ দখলদারদের জন্য নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ, লাইব্রেরি বা রির্সাচ সেন্টার। এবছর করোনার কারণে এক দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,সলঙ্গা,সলঙ্গা দিবস,স্মৃতিস্তম্ভ,তর্কবাগীশ,শহীদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close