চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

  ১০ জানুয়ারি, ২০২২

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ!

যশোরের চৌগাছায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হয়রানি, বন্ধ ভাতা চালু করার নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ, পুরোনো পোস্ট অফিসের জমি ও কপোতাক্ষ নদের জমি দখল, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন নাশের হুমকিসহ একাধিক অভিযোগ তুলে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আাব্দুস সালামের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সোমবার সকালে চৌগাছা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন আড়ারদাহ গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল আলিমের ছেলে মোঃ জুয়েল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উপজেলার আব্দুস সালামের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ও রোষানলে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা অসহায় হয়ে পড়েছে। তার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ব্যক্তি আক্রোশে ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি ২০১৫/২০১৬ সালে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি মামলা করেন। এই মামলার পর ৪০জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের চলমান ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সীমাহীন মানবেতর জীবন করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবাররা। মিথ্যে মামলা মোকাবিলা করতে আইনি লড়ায়ে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। এ অবস্থায় পুনরায় বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, তার কথা শুনলে ভাতা আবার চালু হয়ে যাবে। মন্ত্রনালয়ে ও বিভিন্ন স্থানে টাকা খরচ করতে হবে। এমন আশা দিয়ে তিনি ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ভাতা বন্ধ হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ির গরু ছাগল ও সম্পদ বিক্রি করে তার হাতে টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, আব্দুস সালাম হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দিচ্ছেনা। এমনকি টাকা চাইলে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে বিগত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যে তথ্য উপাস্থাপন করেন। এমনকি ক্ষমতা দেখিয়ে দেশের বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর তদন্ত বন্ধ করে দেন। তারকর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত।

এমনকি ইতোপূর্বে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে ঝাঁটা মিছিল হয়েছে। তিনি সাবেক সিবিএ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও নব্য আওয়ামীলীগ নেতা। ক্ষমতার জোরে তিনি কপোতাক্ষ নদের জমি ও ভূমি মন্ত্রনালয়ের জমিতে অবস্থিত পুরোনো পোস্ট অফিসের জমি দখল করেছেন। নদের জমিতে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। ইতোপূর্বে জাতীয় একটি দিবসে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে ফেলেন ও অনুষ্ঠানের মাইক ভেঙে ফেলেন। তার এমন ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা সে সময় প্রতিবাদ করেন।

বর্তমানে বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল আওয়ামী লীগের সাথে মিশে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন নতুন নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আব্দুস সালামের নেতৃত্বে অল্পকিছু মুক্তিযোদ্ধারা যাওয়া আসা করেন। তার দুর্নীতি, অপমান ও ষড়যন্ত্রের কারণে ১৬০/৭০ জন মুক্তিযোদ্ধারা ওই কমপ্লেক্সে যান না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার বয়স ৭৬ বছর। বিতর্কিত আব্দুস সালাম আমার যুদ্ধাহত ভাতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। উচ্চ আদালত থেকে আমার পক্ষে রায় দেয়া হলেও উপর মহল থেকে যুদ্ধাহত ভাতার গেজেট বন্ধ করা হয়। তিনি বলেন আমার স্ত্রী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে একপ্রকার বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলী বলেন, ভাতা চালু করার নামে আমার নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আব্দুস সালাম। সেই টাকা ফেরতও দেয়নি ও মামলা প্রত্যাহারও করিনি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।রর

সংবাদ সম্মেলনে কেসমতখাপুর গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম, দিঘলসিংহা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, ধুলিয়ানীর মুক্তিযোদ্ধা সফিয়ার রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সামসুর রহমান, হয়াতপুরের অহেদ আলী, দক্ষিণ সাগর গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মরহুম চকম আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম রেজাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চৌগাছা,যশোর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close