গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১০ জানুয়ারি, ২০২২

বিদ্যুতের মিটার চুরি আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎ মিটার চুরির ঘটনায় মিটার মালিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার প্রতিকারের জন্য রাত জেগে অনেকেই পাহারা বসিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চলতি মাসে কামারখন্দে চালকল মালিকদের ১৭টি ও কাজিপুরে ৪টি মিটার চুরি ঘটনা ঘটেছে।

মিটার মালিকেরা জানান, মিটার চুরি হলেও চোর মিটারের খালি বক্সে একটি চিরকুট রেখে যায়, যাতে লেখা থাকে একটি ফোন নাম্বর । পরে ওই নম্বরে ফোন দিলে নিদিষ্ট পরিমাণ টাকার দাবি করে। টাকা দিলে মিটার রেখে আসার কথা জানান চোরের দল।

কাজিপুর উপজেলা সোনামুখির সেচ সংযোগ গ্রহিতা রফিকুল ইসলাম জানান, আমার মটর ও মিটার ১০ বছর যাবৎ বাইরেই রয়েছে। আজ একথা শুনে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল।

কামারখন্দ উপজেলার কর্ণসূতি গ্রামের চালকল মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, এর আগেও মিটার চুরি হয়েছিল, আবারও শুরু হয়েছে। যদিও আমার মিটার অক্ষত আছে তবুও আতঙ্কে আছি কখন যেন চুরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, মিটার চুরি ঠেকাতে সারা রাত পাহারা দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, কাজিপুরে দুটি রাইস মিল ও দুটি সেমি অটোমিলের ৪টি মিটার চুরি করে একটি মোবাইল ফোন নম্বর রেখে যায় দুস্কৃতিকারীরা। চিরকুটে লেখা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে মিটার ফেরত নেওয়ার পথও বলে দেয়া হয়েছে। এমনি অভিনব চুরির ঘটনা ঘটেছে ৮ তারিখ গভীর রাতে। কাজিপুরের সোনামুখি ইউনিয়নের হরিনাথপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার হরিনাথপুরে শাহাদত হোসেন রাজের একটি সেমিঅটোমিল, রুবেল হোসেনের একটি রাইস মিল, এবং কাজিপুর উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের একটি সেমিঅটো রাইমিল রয়েছে।

প্রতিদিনের মতো সকালে তিনি মিলে গেলে মিটার চুরি হওয়ার বিষয়টি তার চোখে পড়ে। এ সময় তিনি অন্য মিল মালিকদের ফোন করলে তারাও তাদের মিটার চুরির বিষয়টি জানান।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, মিটারের কাছে গিয়ে দেখি, গোল একটি মোটা কাগজ পড়ে আছে। সেই কাগজে বড় করে লেখা একটি ফোন নাম্বর। নাম্বরের নিচে লেখা আছে মিটার পাবে। মিল মালিক আব্দুর রাজ্জাক ঐ ফোন নম্বরে ফোন দিলে রিসিভ করে ৬ হাজার টাকা দাবি করে বলে জানান তিনি।

কামাখন্দ উপজেলার চালকল মালিক সাগর আলী জানান, গত দেড় বছর আগে আমার মিটার চুরি হয়েছিল। আবারও হঠাৎ মিটার চুরি বেড়েছে। এ সময় চোর চক্র মিটার ফ্রেমে টোকেনে একটি বিকাশ নম্বর রেখে যায়। ঐ নম্বরে ফোন দিলে প্রতি মিটার ৬ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে প্রতিটি মিটারে ৩ হাজার করে ৯ হাজার টাকা দিলে চালকলের কাছে একটি বাড়ির পাশে বালুর ভেতরে মিটারগুলো রাখা আছে বলে জানায় চোরেরা। পরে সেখান থেকে মিটারগুলো উদ্ধার করা হলেও বিদ্যুতের সংযোগ না পেয়ে বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরতে হচ্ছে।

কামারখন্দ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীর জানান, মিটার চুরির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এর আগেও মিটার চোর চক্রের চারজন সদস্যকে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ওই এলাকায় গত প্রায় দুই বছরে মিটার চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রতিক মিটার চুরির অভিযোগ পেয়েছি। আগের মতো এবারও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব বলেই আমরা মনে করি।

কাজিপুর থানার ওসি পঞ্চন্দ সরকারকে জানালে তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অখীল কুমার সাহা জানান, কামারখন্দের ১৭টি মিটার চুরির ঘটনায় থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মিটার চুরি রোধে মাইকিং করা সহ লিফলেট বিতরণ ও গ্রাহকদের মিটার পাহারা দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,মিটার চুরি,রাত জেগে পাহারা,চালকল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close