কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

ভাসানচর যাচ্ছে আরও ৩৭৯ রোহিঙ্গা

উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সপ্তম দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১১টার পর উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে তাদের নিয়ে ৭টি বাস রওনা দিয়েছে। সেখানে ২৫৭ রোহিঙ্গা রয়েছে জানা গেছে। বিকালে আরও ১২২ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্যােশে উখিয়ার ডিগ্রি কলেজ ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও সরকারের মধ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানে রোহিঙ্গাদের নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ দফায় প্রায় দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার কথা ছিল।

উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। তারা বুধবার সকালে বাসে করে ভাসানচর যেতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা রাতে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে পরেরদিন নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বুধবার সকালে সপ্তম দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান, সপ্তম দফায় প্রথম দলের রোহিঙ্গাদের একটি অংশ উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার কারণে আতঙ্কিত উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, বালুখালীসহ বিভিন্ন শিবিরের অনেকে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন, যারা আগে সেখানে যেতে চাননি।

১৪ এপিবিএনের এসপি মো. নাইমুল হক জানান, বুধবার সকালে ১১ টার দিকে ৭ টি বাসে করে ২৫৭ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন বিকাল ৫ টার দিকে ৪ বাসে করে আরও ১২২ জন মোট ১৬৮ পরিবার। রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ত্যাগ করেছে। আরও রোহিঙ্গাদের দল যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫শ রোহিঙ্গাকে সরকার ভাসানচরে পাঠায়। এছাড়া গত বছর মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

উল্লেখ, ২০১৭ সালের ২৫ অগাষ্টের পর মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফ শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিল। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভাসানচর,উখিয়া,রোহিঙ্গা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close