জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ১৩ অক্টোবর, ২০২১

জরাজীর্ণ কাঠের সাঁকোতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার আবদুর রহমান সায়েদ পৈতৃক ভিটের ওপর বসবাস করছেন প্রায় ৩৮ বছর। সায়েদের বসত ঘরে ঘেঁষে বয়ে গেছে ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও দেড়’শ ফুট প্রস্থের নোয়াখালী খালের একটি অংশ।

জানা যায়, মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বর্তমানে খালটির প্রস্থ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ ফুট। খালের ওপর স্থায়ী কোন ব্রিজ না থাকায় স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় একটি কাঠের সাঁকো।

এ খালই কাল হয় আব্দুর রহমান সায়েদের, ২০১৯ সালের শেষের দিকে এ ভাঙা সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যায় তার তিন বছর বয়সী ছেলে আবির হোসেন। শুধু রহমানের ছেলে আবির নয়, এ সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা গেছেন একই গ্রামের আলমগীরের ছেলে মনির হোসেন(৪) ও কামাল উদ্দিনের ছেলে মোহন(৩)। আবার বিভিন্ন সময় আহত হয়েছেন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা।

একটি ব্রিজের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দু’গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। ব্রিজ না থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উল্যাহ সড়কটি ব্যবহার করতে পারছে না স্থানীয়রা। কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতু নির্মাণে জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া আছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, এলাকার লোকজন ২০ বছর আগে ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী মেঘনার জোয়ারের পানি প্রবেশের কারণে প্রতি বছরে খালের আয়তন বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ২৭০-২৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। যা প্রতিবছর ২ থেকে ৩ বার ভেঙে পড়েছে।

এ বিষয়ে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, প্রতিদিন ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ভাঙা ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এ এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষকে এভাবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাঁকো পার হতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াত করতে পারলেও বর্ষায় অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েন এখানকার বাসিন্দারা। অতি প্রয়োজনে তখন যাতায়াতের মাধ্যম হয় নৌকা ও কলাগাছের বেহুলা।

ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আলম পারভেজ বলেন, বছরে দুই থেকে তিনবার ভেঙে পড়ে সাঁকোটি। আর এটি মেরামত করতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাসিন্দা ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সম্মিলিত চাঁদার টাকায় ভরসা।

গত দু’বছরে নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে তিন ধাপে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সাঁকোটি একবার ভাঙলে তা পুনর্নিমাণে ব্যয় হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। কাঠের সাঁকোটি বারবার এত টাকা খরচ করে মেরামত না করে খালের ওপর সরকারিভাবে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।'

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কবিরহাট উপজেলা প্রকৌশলী হরষিত কুমার সাহা বলেন, ব্রিজের স্থানটি আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। কাঠের সাঁকোটির স্থলে একটিক্র ব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি। তাই উপজেলার ইউনিয়ন ও গ্রামের অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার যে সেতু প্রকল্প রয়েছে তা এ প্রকল্পে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির অনুমোদন দিলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নোয়াখালী,কাঠের সাঁকো
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close