রায়হান সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

  ০৫ জুলাই, ২০২০

যে বিদ্যালয় পাল্টে দিল পুরো গ্রাম

ফসলের মাঠের বুক চিরে সোজা রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভেতর। মেঠোপথের দু'পাশে যেন অন্যরকম অনুভূতি। বাতাসে যেন ছড়িয়ে পড়ছে সবুজের ঘ্রাণ। গ্রামীণ জনপথে গড়ে উঠেছে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টির কারণে পাল্টে গেছে পুরো গ্রাম। ছোটবেলায় দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে চোখমুখে পথ না দেখে পড়ালেখার মায়া ছেড়ে পরিবারের অন্য দশ জনের মতো মহিউদ্দীন নামের এক যুবকের বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল জীবিকার তাগিদে। এতে করে বাড়িতে স্বচ্ছলতার দেখা মিললেও অন্তরে রয়েছে ছোটবেলায় পড়ালেখা করতে না পারার কষ্ট।

মহিউদ্দীনের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তখন থেকে ভাবতে থাকেন বড় হয়ে নিজের জন্য না হলেও এলাকাবাসীর জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন তিনি। যাতে করে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যাহত না হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা মিরিখিল নতুন পাড়ার মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ মহীউদ্দীন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক তেমন শিক্ষিত ব্যক্তি নন। তারপরও এলাকায় শিক্ষার আলো প্রসার করতে সবসময় ভাবেন।

আর সেই চিন্তা থেকেই তার বাড়ির পাশে পারিবারিক ৩৩ শতক জমির ওপর একটি বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই এলাকায় বিগত সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে অনেক দূর যেতে হতো। স্থানীয় মিরিখীল এলাকায় কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। যেখানে ৩ হাজারের অধিক পরিবারের বসবাস। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এলাকাবাসীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় উঠান বৈঠক করেছেন তিনি।

লোহাগাড়ার স্কুলপাগলা খ্যাত আধুনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল কবির ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বাবর বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল কবির। বিদ্যালয় নির্মাণে লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে মিরিখিল সোলতান আহমদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় বছরের আগস্টে এবং শেষ হয় ডিসেম্বরে। বিদ্যালয় নির্মাণে কংক্রিট দেন লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন, ইট দেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আনোয়ার কামাল, টিনের ব্যবস্থা করেন চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু কোম্পানি, সম্পূর্ণ দরজা জানালা রিয়াজ উদ্দীন বাজার বণিক সমিতির উপদেষ্টা জসিম উদ্দীন কবির। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮৭জন, ৪জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনেই আমরা সকলেই আনন্দিত। কারণ আমাদের ছেলে-মেয়েদের পাহাড়ি মেটো পথ বেয়ে আর কষ্ট করে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়তে হবে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমরা সত্যিই আনন্দিত। আমাদেরকে আগে অনেক দূর গিয়ে পড়ালেখা করতে হতো। এখন গ্রামের পার্শ্বে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে সুযোগ পাচ্ছি।

লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লোহাগাড়ায় বিদ্যালয়বিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয় উদ্যোগকে প্রেরণা দিয়েছি। কয়েকবার মিরিখিলে উপস্থিত হয়ে গ্রামবাসীর পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছি। ভবিষ্যতেও বিদ্যালয়টির যে কোনো কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৌছিফ আহমেদ জানান, অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াচ্ছে দুর্গম এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি উন্নয়নে কোনো কিছু দরকার হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে বিদ্যালয়টি সরকারি করণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চুনতি মিরিখীল গ্রামের সর্বস্তরের জনসাধারণ।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিদ্যালয়,গ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close