চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২০

সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। নির্বাচনে সরকার কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করছে না। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর।

শনিবার রাউজানে নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নবনির্মিত ১৫ নম্বর নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স শুভ উদ্বোধন-মিলন মেলায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কথা উঠলেই এক সময় ‘বটমলেস বাস্কেটের’ তুলনা টানা হতো। শেখ হাসিনা সরকার দেশের এই দুর্নামটি শুধু দূর করেননি, তার অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে সমালোচক দেশগুলোরও প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংকও এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে। বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্বে একটি আলোচিত দেশ। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলার।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যমআয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশগুলোর মতো উচ্চ আয়ের দেশ হবে যে সন্দেহ নেই।

২০০১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ৩৩ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন, আমাদের সরকার আমলে কোনো ঘাটতি ছিলনা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জবাবে বলেছিলেন, খাদ্য ঘাটতি না থাকলে বিদেশি অনুদান পাওয়া যায় না। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ৩০ লক্ষ মানুষ ভিক্ষা করে চলার জন্য শহীদ হয়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছেন একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার। এজন্য তিনি সারাজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় অল্প সময়ের কারণে অনেক কিছু করতে পারেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ উন্নয়ন যাত্রা কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরো বলেন, দেশজুড়ে নানা ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রামবাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, শহর এলাকার সড়ক, ফুটপাত, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন কার্যক্রমে বড় অংশ বাস্তবায়ন করে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়। এছাড়াও স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং গ্রামীণ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়।

তিনি আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করেছেন বলে মাত্র ৯ মাসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। খাদ্য খাটতি, বিদ্যুৎ সংকট দূর হয়েছে। রাষ্ট্র যখন সফল হবে তখন রাষ্ট্রের নিজ নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। শিল্পায়ন ও ঘরের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সবসময়ই আপোষহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে তার সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন এবং রায় কার্যকর করা হয়। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতায় আজ দেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকা স্থান করে নিয়েছে। সামনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিবে।

মন্ত্রী এসময় উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু পাঠাগার করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে অফিস করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হক বাবুলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিশুপার্কের জায়গায় এবং অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলুল কবির চৌধুরী বলেন, আমাদের রাউজান হরতাল, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত উপজেলা। এখানে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই। রাউজানে ৩ শত বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ১৮২ টি বিদ্যালয়ে ২০ হাজার দুপুরে টিফিন প্রদান করা হয়। ডেঙ্গু প্রকোপ দেখা দেয়ার সময় প্রত্যেক ইউনিয়নে মশা নিধণের জন্য মেশিন ক্রয় করা হয়েছিল। রাউজান উপজেলা ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ামুক্ত উপজেলা।

স্বাগত বক্তব্যে নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার্দী সিকদার বলেন, নোয়াজিষপুরকে স্বপ্নের ইউনিয়ন পরিষদ বানাতে আগামীতে শতভাগ মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ ও পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, স্থানীয় সরকার প্রকৌকলী অধিদপ্তর প্রধান প্রকৌশলী সুশংকর চন্দ্র আচা ও স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগ উপপরিচালক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজিসহ প্রমুখ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাউজান,স্থানীয় সরকারমন্ত্রী,মো. তাজুল ইসলাম,ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close