reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ মার্চ, ২০২৪

চাহিদা ও যোগানের তথ্যে বিশাল গরমিল, নাজেহাল ভোক্তা

ফাইল ছবি

উৎপাদনে উদ্বৃত্তের হিসাব, হচ্ছে আমদানিও। তাহলে, বাড়তি পণ্য খাচ্ছে কে বা কোথায় যাচ্ছে? বাস্তবে চাহিদা-যোগানের তথ্যেই বিস্তর ফারাক। এই সুযোগেই ভোক্তাদের ঘোল খাওয়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্য বিভ্রাট দূর না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে না কোনো উদ্যোগ।

অস্থির দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। প্রতিদিনই ওঠানামা করছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এই সুযোগে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তার প্রশ্ন- নিত্যপণ্যের বাজারে হচ্ছে কী? প্রতিনিয়ত ঠকছে কে? কেনোই বা কারসাজির কলকাঠি বরাবরই থেকে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীর হাতে?

পেঁয়াজ; যে পণ্যের ঝাঁজে ভোক্তার চোখ জ্বলে বছরজুড়েই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণজনিত নষ্ট ২৫ শতাংশ ধরলে যোগান দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন।

অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দাবি, পেঁয়াজের মোট উৎপাদন ২৫ থেকে ২৬ লাখ মেট্রিক টন। সংরক্ষণজনিত নষ্ট বাদ দিলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর যোগান ১৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।

দেশীয় উৎপাদনের সঙ্গে আমদানি করা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন যোগ করলে কৃষি সম্প্রসারণের যোগান দাঁড়ায়, ৩৩ লাখ মেট্রিক টনে, যা সর্বোচ্চ চাহিদা ২৮ লাখ মেট্রিক টনের চেয়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন বেশি। যা দিয়ে ২ মাসের বেশি সময়ের বাজার চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তাহলে উদ্বৃত্ত এই পেঁয়াজ খেলো কে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিবিএস দিচ্ছে ঘাটতির হিসাব। যেখানে স্বাভাবিক চাহিদার বিপরীতে প্রায় এক মাস পেঁয়াজ শূন্য থেকেছে বাজার। আর ক্রেতারা জানান, পরিসংখ্যান কখনোই সঠিক তথ্য দেয় না। এটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

চাহিদা-যোগানের এমন তালগোলে হিসাবের মাশুল গুণতে হচ্ছে আলুর বাজারেও। ৯০ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে।

বিবিএসের এমন তথ্যের বিপরীতে কোল্ড স্টোরেজ মালিক সমিতির দাবি, আলুর উৎপাদন ৮৫ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে। সরকারি তথ্য সঠিক হলে ১৪ লাখ উদ্বৃত্ত আলু গেলো কোথায়? ভোক্তার দাবি, এসব পরিসংখ্যান কখনোই কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায় না। পাশপাশি জনগণের কাছেও সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয় না।

চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে ২ কোটি ৫৮ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ২ কোটি ৮৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন নিয়েও আমদানি করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় চাহিদা-যোগানের সমীকরণ। এ অবস্থায় বাজার থেকে তথ্য বিভ্রাট দূর করার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, বিবিএস বছর শেষে চাহিদা-যোগানের তথ্য হিসাব করে। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-দফতরগুলো উৎপাদনের সময়ই মাঠ পর্যায়ে যেয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। তথ্য বিভ্রাট দূর করতে বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া পরিসংখ্যানের মাঝামাঝি কোনো সংখ্যাকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

এদিকে, উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্যশস্য আমদানিতে বাংলাদেশ কেনো তৃতীয়- সেই প্রশ্নও বাজারে অসহায় ভোক্তাদের।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চাহিদা,ভোক্তা,পণ্য উৎপাদন,আমদানি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close