অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ০৩ জুন, ২০২৩

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট

জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় বিজিএমইএ সভাপতির

ছবি : সংগৃহীত

দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা গ্যাস ও বিদ্যুৎ না থাকায় আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। একইসঙ্গে পোশাক খাতে নগদ সহায়তার উপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারসহ উৎসে কর আগের মতো দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (০২ জুন) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলস্থ আজিজ গ্রুপ সেন্টার অডিটরিয়ামে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

অর্থমন্ত্রী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ফারুক হাসান। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দুইবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরেই এই অবস্থা, আমাদের কারখানায় বিদ্যুৎ থাকে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জায়গাটিতে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং এই অসাধু কর্মকাণ্ডের পেছনে লাইনম্যান, মিটার রিডার ও ভোক্তা, যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩টি পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা মনে করি, এর ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে আমরা দাবি করব, যেন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি এলএনজি ও এলপিজির আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি করা হলে একদিকে আমাদের শিল্পে উৎপাদন খরচ কমবে, আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়বে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেটি অর্জন সহজ হবে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রত্যাশার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি বলেও মনে করেন তিনি। ফারুক হাসান বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাইনি। বিশেষ করে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার যে প্রস্তাব আমরা করেছিলাম, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসংগত। আমরা মনে করি, এই সংকটময় সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হবে।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আরও যেসব সব দাবি জানানো হয়, সেগুলো হলো- ১. তৈরি পোশাক শিল্পের মূল্যায়নের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয়, যেমন– সম্পদ নিষ্পত্তি, সাব-কন্ট্রাক্ট আয়ের ওপর লাভ এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে (৩০ শতাংশ) কর আরোপ না করে করপোরেট কর হার ১২ শতাংশ হারে আরোপ করা। ২. তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের রুল-১৬ এর টেবিল-১ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির দাম পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা, ওই করকে চূড়ান্ত কর আদায় হিসেবে গণ্য করা, অন্যথায় মূল্যায়নের সময় কর আরোপকালে করপোরেট কর হার ১২ শতাংশ হারে ধার্য করা এবং ৩. রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের ইআরকিউ (এক্সপোর্টার রিটেনশন কোয়াটা ফান্ড) থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করে ১০ শতাংশ করা।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিজিএমইএ,তৈরি পোশাক,আজিজ গ্রুপ সেন্টার,তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close