খালিদ হাসান

  ০৫ জুন, ২০১৮

দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ২০৯ লঞ্চ

বিশেষ ব্যবস্থায় নামছে ৫টি

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুত নৌপথ। দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষকে বহনে প্রস্তুত ২০৯টি লঞ্চ। আজ থেকে ঈদের আগের দিন-রাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলমুখী প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে এসব নৌযান। এর মধ্যে বিভিন্ন রুটের পাঁচটি নতুন বিশালাকৃতির লঞ্চ ঈদ উপলক্ষে নতুন যাত্রী পরিবহনে নামছে। অপরদিকে ২০৪টি লঞ্চের মধ্যে যেগুলো পুরনো বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল সেগুলোর বেশির ভাগেরই রং ও ত্রুটি সারিয়ে ফের চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।

এমনকি ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে এরই মধ্যে দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় ঈদে ঝামেলামুক্ত নৌযান চলাচলে করণীয় সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সেসব নির্দেশনা লঞ্চ মালিক বা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা ঈদযাত্রার এমন প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঈদের সময় চাপ বেশি থাকে। তবে এবার আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ রয়েছে। তাই আশা করি, যাত্রী পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে না। তবু নৌযানে বাড়তি যাত্রী কিছুটা উঠতে পারে। তবে এটি সহনশীল পর্যায়ে রাখা হবে। তাছাড়া আমরা যখন দেখব কুলিয়ে উঠতে পারছি না, তখনই লঞ্চ ছেড়ে দেব। আমাদের লঞ্চে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বয়া, লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। কোনো অসুবিধা হবে না।’

এদিকে ঈদে নৌপথে যাতায়াত ঝামেলাহীন হবে—দাবি করে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবীর বলেন, এবারের ঈদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ২০৯টি লঞ্চ চলাচল করবে। গত ঈদের তুলনায় এবার বড় পাঁচটি লঞ্চ বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কাউকে লঞ্চে ভ্রমণ করতে হবে না বলেও জানান তিনি।

ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচলের ব্যাপারে এই কর্মকর্তা জানান, একটি লঞ্চের গড় আয়ুষ্কাল থাকে ৩০ বছর। কিন্তু তিন-চার বছর চলার পরই অনেক লঞ্চের রং বা রিপেয়ারিং করার দরকার পড়ে। তার মানে এই নয় যে লঞ্চের ফিটনেস নেই। যখন ফিটনেস থাকে না, তখন এমনি লঞ্চ আর চলতে পারে না।

ঈদের সময় নদীবন্দর ও নৌপথের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ১৭০ জন পুলিশ ফাঁড়িতে যোগ দিয়েছেন। ঈদযাত্রা শুরু হলে আরো টিম আসবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রায় ৫০০ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে ঈদে ঘরমুখো নৌযাত্রীদের লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকিট বুকিং গত ২৯ মে থেকে শুরু হয়েছে। টিকিট পাওয়া যাবে ১৮-২০ রমজান পর্যন্ত। আর বিআইডব্লিউটিসির স্টিমারের টিকিট বুকিং শুরু হবে ১৫ রমজান থেকে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ঈদে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিলাসবহুল লঞ্চের সংখ্যা বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।

ঘরমুখো মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। টার্মিনালের কর্মকর্তারা জানান, যাত্রীদের ভোগান্তি ও উপচেপড়া ভিড় রোধে লঞ্চগুলো রাখা হবে স্ট্যান্ডবাই। পাশাপাশি টার্মিনাল ও আশপাশে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। গতবারের মতো এবারও ঈদে নৌপথের যাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাত্রীদের নিরাপদে স্বজনদের কাছে পৌঁছাতে। গতবারের মতো এবারও কোনো বিঘ্ন ছাড়াই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যস্থলে যেন পৌঁছাতে পারে, সেজন্য নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। টার্মিনাল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। রাস্তার যানজট এড়াতে টার্মিনালে যাত্রী ছাড়া কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

এই কর্মকর্তা আরো বলেন, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিআইডব্লিউটির স্পেশাল ক্যাডেট, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিশেষ বাহিনী লঞ্চঘাটের বিভিন্ন স্থানের নিরাপত্তা এবং দুর্ভোগ এড়াতে সর্বদা তৎপর থাকবে। এ ছাড়া সদরঘাট টার্মিনাল এখন স্থায়ীভাবে হকারমুক্ত। আগে তাদের তাড়িয়ে দিলে তারা একটু পরই আবার ফিরে আসত। এখন সেটাও দমন করা হয়েছে। ঈদের সময়ও তা বহাল থাকবে। আগে যেমন চুরি, ছিনতাই, মলম পার্টির খপ্পরে অনেকে সর্বস্ব হারাত, এখন আর এসব নেই। টার্মিনাল এখন এসব অপরাধমুক্ত।

ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে আরিফ উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে না, সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হবে। বরং ঈদের মৌসুম ছাড়া অন্য সময় ভাড়া অনেক কম নেওয়া হয়। তাই এ সময় যাত্রীরা মনে করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু মোটেও তা অতিরিক্ত নয়।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৮০টি লঞ্চ চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে ২৫ রোজা থেকে স্পেশাল লঞ্চসহ প্রতিদিন ১৫০টি লঞ্চ চলবে। এ ছাড়া এক হাজার যাত্রী যেন টার্মিনালে অপেক্ষা করতে পারে, সে ব্যবস্থাও থাকবে। অতিরিক্ত যাত্রী রোধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আগের ন্যায় এবারও আমরা ঈদ সামনে রেখে ‘ঈদ ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, নৌ-ক্যাডেট, ম্যাজিস্ট্রেট, লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতারা রয়েছেন। এই কমিটি সার্বিক বিষয় দেখভাল করবে।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদযাত্রা,নৌপথ,দক্ষিণাঞ্চল,লঞ্চ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist