নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জুন, ২০২২

সোয়েটার রপ্তানি

ইউরোপ এগিয়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে

তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। মৌসুমি পোশাক হিসেবে পরিচিত সোয়েটার রপ্তানিতেও একই স্থান ধরে রেখেছেন দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। দেশে উৎপাদিত সোয়েটারের ৬০ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপের বাজারে। মৌসুমি পোশাকটির দ্বিতীয় রপ্তানি গন্তব্য বিভিন্ন অপ্রচলিত বাজার, রপ্তানি করা সোয়েটারের ১৪ শতাংশের গন্তব্য এসব অপ্রচলিত বাজার। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় বাজারেই দেশে উৎপাদিত সোয়েটার রপ্তানির পরিমাণ ১১ শতাংশ। কানাডায় রপ্তানি করা হয় মাত্র ৪ শতাংশ পণ্য।

২০২১-২২ মৌসুমের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সোয়েটার রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে ৪০৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ মৌসুমে সোয়েটার রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১২৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ২০২০-২১ মৌসুমে এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ৪০৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। সোয়েটার রপ্তানিতে দেশের বার্ষিক আয় প্রবৃদ্ধির হার ১৪ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে সোয়েটার রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখল করে আছে চীন। বৈশ্বিক সোয়েটার রপ্তানিতে দেশটির অংশ প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০২০ সালে সোয়েটার পণ্য রপ্তানি থেকে চীনের আয় হয়েছে ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। প্রায় ১০ শতাংশ রপ্তানি বাজার দখলে রেখে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে সোয়েটার পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৫০৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। প্রায় ৭ শতাংশের দখল নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ভিয়েতনাম। সোয়েটার রপ্তানিতে শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য দেশগুলো হলো যথাক্রমে ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক, হংকং, চীন, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স।

বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সোয়েটার পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম স্থানে। দেশটিতে রপ্তানি করা সোয়েটারের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশের জোগান দেয় বাংলাদেশ। গত বছর মৌসুমি পোশাক পণ্যটি রপ্তানি করে মার্কিন বাজার থেকে বাংলাদেশের আয়ের পরিমাণ ৬৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার। মার্কিন বাজারে সোয়েটার রপ্তানিতে ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাজার দখল করে শীর্ষ স্থানে আছে চীন। গত বছর এ খাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশটির আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সোয়েটার পণ্য রপ্তানিতে বাজারের ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশের দখল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভিয়েতনাম। গত বছর মার্কিন বাজারে সোয়েটার রপ্তানি থেকে দেশটির আয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানি করা সোয়েটারের ৬ দশমিক ৭ শতাংশের জোগান দেয় তৃতীয় স্থানে থাকা হন্ডুরাস ও ৬ শতাংশের জোগান দেয় চতুর্থ স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে সোয়েটার রপ্তানিতে বিশ্ববাজারের মতোই দ্বিতীয় শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। অঞ্চলটিতে দেশীয় কারখানাগুলোর উৎপাদিত সোয়েটার রপ্তানির পরিমাণ ইইউর আমদানির ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছর ইইউর বাজারে এ খাত থেকে বাংলাদেশের আয়ের পরিমাণ ২৮৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। তবে বিশ্ববাজার ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ অঞ্চলের বাজারেও শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে চীন। ইইউর বাজারে আমদানি করা ১৬ শতাংশ সোয়েটারের জোগান দেয় দেশটি। গত বছর ইইউর বাজারে এ খাত থেকে চীনের আয়ের পরিমাণ ৩৭৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। ইউরোপের সোয়েটার আমদানির ১১ শতাংশের জোগান দেয় তৃতীয় স্থানে থাকা জার্মানি, গত বছর এ বাজার থেকে সোয়েটার রপ্তানিতে দেশটির আয় ছিল ২৫৮ কোটি ডলার। আমদানির ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশের জোগান দিয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্কের একই সময় আয় ছিল ১৮২ কোটি ডলার।

বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউএস মার্কেটের আমদানিকারকরা এলডিপি (ল্যান্ডেড ডিউটি পেইড) বিজনেস করে। ওই বিজনেস মডেলটা বাংলাদেশে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। যার কারণে ইউএস স্টোরগুলো সরাসরি বিজনেস করার পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইম্পোর্টারের মাধ্যমে করে থাকে। তা ছাড়া ইউএস মার্কেটে সোয়েটার রপ্তানির ক্ষেত্রে কাঁচামালের ক্যাটাগরিতে কিছু চাহিদা থাকে, যা চীন ও ভিয়েতনামে খুব অ্যাভেইলেভল। এ কারণে ওরা চীন ও ভিয়েতনাম থেকে বেশি আমদানি করে। তবে বাংলাদেশের কিছু কারখানাও ইদানীং এসব কাঁচামাল ব্যবহার করা শুরু করেছে। আশা করি খুব দ্রুতই ইউএস মার্কেটে বাংলাদেশের সোয়েটার রপ্তানির হার বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close