নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে চলতি হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) শুরু থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে চাঙাভাব। পাশাপাশি রফতানিও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। অন্যদিকে কমেছে আমদানির পরিমাণ। এতে দেশের চলতি হিসাবে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে। মূলত আমদানির চেয়ে রফতানি বৃদ্ধির হার বেশি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর চাপ কমে এসেছে। উল্লিখিত সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের আগস্ট মাসের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৬৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে প্রায় ৭৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২০৫ কোটি ডলার। উল্লিখিত সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় অত বাড়েনি। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

কমেছে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৫০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ অর্থবছর একই সময়ে তা কমে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। সাধারণত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

জুলাই-আগস্ট সময়কালে ৩৬ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে দুই মাসে এফডিআই কমেছে প্রায় ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।

উল্লিখিত সময়ে প্রায় ৪৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর এই দুই মাসে পাঠিয়েছিলেন ৩০৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে দুই মাসে রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি অতীতে কখনোই হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close