reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

ঠান্ডা গোশত

মূল : সাদ’ত হাসান মান্টো, অনুবাদ : কাউসার মাহমুদ

ঈশ্বর সিং হোটেলের ঘরে ঢুকতেই কলাবন্ত কাউর পালং ছেড়ে ঝট করে উঠে দাঁড়ায়। শ্যান দৃষ্টিতে তার দিকে একবার ফিরে দরোজার সিটকিনি বন্ধ করে দিলো। রাত বারোটা পেরিয়েছে। সমস্ত শহরে যেন একটি অখ- নীরবতা বিরাজ করছে।

কলাবন্ত ইতিউতি করে ধপাস করে খাটে বসে। এদিকে ঈশ্বর সিং যেন তার নোংড়া, কুচিন্তার কঠিন বাঁধনকেই খুলতে চাইছে প্রাণপণে। কৃপাণ হাতে যেরকম দাঁড়িয়েছিল সেভাবেই ভাবলেশহীন এককোণে দাঁড়িয়ে আছে সে। কোনো রা নেই। কিছু সময় এভাবেই কেটে গেল। কলাবন্ত নড়ে ওঠে। ওভাবে বসে আরাম হচ্ছিল না তার। তাই পা দুটো খাটের উপর থেকে নিচে ঝুলিয়ে দিয়ে দোলাতে শুরু করে। ঈশ্বর সিং তবু নীরবতা ভাঙেনি। একটি কথাও বলেনি।

কলাবন্তর ভরা শরীর। সারা শরীরজুড়ে থলথলে গোশতের দোলন এবং তারচেয়ে বেশি কিছুতে উন্নত বক্ষ আর বুদ্বিদীপ্ত একজোড়া চোখ। কিশোরের মতো হালকা এক পোঁচ গোঁফরেখা এবং ঘনকালো কেশদামে কলাবন্ত কাউরকে বেশ রাশভারী যৌবনদীপ্তই মনে হয়।

ঈশ্বর সিং সেভাবেই এককোণে নিশ্চল দাঁড়িয়ে। মাথায় আঁট করে বাঁধা পাগড়িটা ধীরে ধীরে ঝুলে যাচ্ছে। হাতে রাখা কৃপাণটা এই বুঝি পড়ে যায়। কিন্তু তার শরীরের যে শক্ত গঠন, চোখের দৃঢ়তা তাতে মনে হয় কলাবন্ত কাউরের উপযুক্ত পুরুষ সেই।

আরো কিছু সময় যখন এমন নিশ্চুপ নিশ্চিদ্রতায় কেটে যায় কলাবন্ত তার সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। জ্বলজ্বলে চোখের পুতুলি দুটি নাড়িয়ে শুধু এতটুকুই বলে, ঈশ্বর সিঁয়া।

ঈশ্বর সিং কোনোমতে ঘাড়টা উঁচিয়ে একবার তাকাল শুধু, কিন্তু তার দৃষ্টিবাণ সহ্য করতে না পেরে মুহূর্তেই মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।

কলাবন্ত চিৎকার করে উঠে, ‘ঈশ্বর সিঁয়া।’ পরক্ষণেই আবার স্বরটা নিচু করে সে ঈশ্বরের কাছে যায় এবং বলে, এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?

ঈশ্বর সিংয়ের সাদা শুকনো ঠোঁট দুটো সামান্য নড়ে ওঠেÑ ‘আমি জানি না।’

কলাবন্ত ক্ষেপে যায়। ‘এ কি রকমের কথা। এটা কি কোনো জবাব হলো?’

ঈশ্বর সিং হাতে রাখা কৃপাণটা এককোণে ছুঁড়ে ফেলে সটান বিছানায় এলিয়ে পড়ে। মনে হয় যেন কত দিনকার অসুখ তার। কলাবন্ত খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে সারাটা বিছানাজুড়ে ঈশ্বর সিং শুয়ে আছে। সহসাই তার মনে কেমন একটা মায়া উথলে উঠে। কাছে এসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মোলায়েম স্বরে বলে, ‘প্রিয়। কি হয়েছে তোমার?’

ঈশ্বর সিং অপলক ছাদের দিকে তাকিয় ছিল। হঠাৎ দৃষ্টিটা ফিরিয়ে সে কলাবন্তর এই একান্ত অন্তরঙ্গ মুখের দিকে কি যেন খুঁেজ বলে, কলাবন্ত! তার কণ্ঠে বিষাদ। ঈশ্বরের এই ডাকে কলাবন্তর অস্তিত্ব যেন তার দুই ঠোঁটে এসে জমা হয়। ঠোঁট কামড়ে সে বলল, ‘বলো প্রিয়।’

ঈশ্বর সিং পাগড়িটা খুলে এক অদ্ভুত আশ্রয়কাতর দৃষ্টিতে কলাবন্তর দিকে তাকায়। তার মেদভরা পেটে খোঁচা দেয় এবং মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে আপন মনেই বলে, ‘এই করে মাথাটাই বিগড়ে গেল কলা!’

জোরে ঝাঁকুনি দেওয়ায় ঈশ্বর সিংয়ের দীর্ঘ চুল ছড়িয়ে পড়ে। কলাবন্ত দু’হাতের আঙুলে তার অবিন্যস্ত চুল ঠিক করতে করতে বড় প্রেমকণ্ঠে বলে, ‘এতদিন কোথায় ছিলে সিঁয়া’?

ঈশ্বর সিং আড়চোখে একবার কলাবন্তকে দেখে বলে, ‘দুশমনের মায়ের ঘরে।’ বলেই, উদ্বাহু হয়ে সে কলাবন্তকে দু’বাহুতে জড়িয়ে নেয় এবং তার উত্থিত বুক কচলাতে শুরু করে। ‘গুরুর কসম! বড় জানদার মেয়ে তুমি।’

কলাবন্ত ঝটকা দিয়ে একদিকে ঈশ্বর সিংয়ের হাতটা সরিয়ে বলে, ‘তোমাকে আমার দিব্যি দিচ্ছি! বলো, ‘কোথায় ছিলে! শহরে ছিলে বুঝি?’

ঈশ্বর সিং তার চুলগুলো একপাশে ভাঁজ করতে করতে

বলেÑ ‘না।’

কলাবন্ত নাছোড়বান্দা। ‘না তুমি শহরেই গিয়েছিলে এবং আবার অতগুলো টাকা লুটে এসে আমার কাছে লুকোচ্ছ।’

‘বাপের জন্মের না, যদি তোমার সঙ্গে মিথ্যে বলি।’

কলাবন্ত সামান্য চুপসে যায়। পরক্ষণেই আবার জ্বলে ওঠে বলে, ‘তবু আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না সে রাতে তোমার কি হয়েছিল! ভালোয় ভালোয় আমার সঙ্গে শুলে। শহর থেকে যত গয়না ডাকাতি করে আনলে তার সবই তো আমাকে পরতে দিলে সে রাতোই। হঠাৎ হলোটা কি! উঠলে, কাপড় পরে কোথায় যেন বেরিয়ে গেলে।’

ঈশ্বর সিং ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হঠাৎ এ পরিবর্তন দেখে কলাবন্ত বলে, ‘এই দেখো তোমার চেহারা কেমন বদলে গেছে। ঈশ্বর সিঁয়া তোমায় কসম দিয়ে বলছি, আমি জানি এর ভেতর কিছু একটা গোলমাল আছে। তুমি আমাকে বলো।’

এই তোমার দিব্যি খেয়ে বলছিÑ ‘কিচ্ছু না।’

ঈশ্বর সিংয়ের গলাটি যেন নিষ্প্রাণ। এতে কলার সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ঠোঁট দুটো বর্জের মতো এঁটে প্রতিটা শব্দ গেঁথে গেঁথে বলে, ঈশ্বর সিঁয়া কি ব্যপার বলো তো, তুমি তো আট দিন আগেকার তেমনটি নেই। ‘এই তুমি সেই তুমিতে

বিস্তর ফারাক।’

কলার এ কথা শুনে পেছন থেকে কেউ যেন তাকে হামলা করেছে এইভাবে লাফিয়ে উঠে ঈশ্বর সিং। শোয়া থেকে পুরোপুরি বসে কলাবন্তকে বাহুতে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘প্রিয়া! এই দেখো আমি আগেকার আমিটিই আছি।’ কে বলে বদলে গেছি। কলাবন্ত তার সঙ্গে কোনো তর্ক করে না। কিন্তু একরকম অনুযোগের স্বরে বলে, তাহলে সে রাতে

গিয়েছিলে কোথায়?

আরে বললাম তোÑ ‘দুশমনের মা-র বাড়ি গিয়েলিাম।’

‘তাহলে বলবে না।’

‘আরে, বলার কিছু থাকলে তো বলবো।’

‘এই শাপ দিলাম, মিথ্যে বললে নিজের হাতে

আমাকে পোড়াবে।’

ঈশ্বর সিং তার হাত দুটো কলাবন্তর কাঁধে ফেলে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। গোঁফের শক্ত পশম কলার নাকে ঢুকে পড়ায় সে হাঁচতে শুরু করলে তারা উভয়েই খিটখিট করে হেসে ওঠে। চকিতে ঈশ্বর সিং তার জামা খুলে এবং কলাবন্তর দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘এসো প্রিয়া! তাসের এক বাজি হয়ে যাক।’

কলাবন্তর নাকের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিল। বিলোল কণ্ঠে চোখের পুতুলি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বলে, ‘জাহান্নামে যাও’।

ঈশ্বর সিং তার মাংশল নিতম্বে জোরে চিমটি কাটে। কলাবন্ত ককিয়ে উঠে দূরে সরে যায়। ‘এমন করো না ঈশ্বর সিঁয়া। ব্যথা লাগে।’

ঈশ্বর সিং আবার উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং ঠোঁট দুটো তার দাতের নিচে রেখে কামড়াতে থাকে। ক্রমেই কলাবন্ত পাগল হয়ে ওঠে। একেবারে গলে যায় যেন। ঈশ্বর সিং বললো, ‘নাও! এবার তুরুপের চাল হয়ে যাক। ’

কলাবন্তর উপরের ঠোঁট দুটো ঠকঠক করে কাঁপছিল। ঈশ্বর সিং বকরির চামড়া ছেলার মতো তার শরীরের সমস্ত কাপড়ের গিঁটগুলো খুলে একদিকে ছুঁড়ে ফেলে। ঘুরে তার নগ্ন দেহে এক পলক তাকিয়ে বাহুতে সাপটে নেয়। এবং বলে, মাইরি বলছি কলা, তুই বড্ড ভালো মেয়ে...। কলাবন্ত নিজের বাহুতে পড়া লাল দাগটিতে তাকিয়ে বলে, ‘তুই বড় জালেম শিয়া!’

ঈশ্বর সিং তার ঘন কালো গোঁফের ভেতর একটু হাসল, ‘আজ জালেম হতে দে’। এবং এই বলেই সে যেন আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কলাবন্তের দুই ঠোঁট ভিজিয়ে দেয়। দাঁতে কানের লতি কাটে। উপুর হয়ে সমস্ত বুক কচলে দেয়। ভরা গম্ভীর অথচ একটি অনুচ্চ সুরিয়ালিস্ট সৃষ্টির অভিপ্রায়ে শরীর চাটে। গাল ভরে চুমু খায়। ধীরে ধীরে প্রকৃত কায়দায় শোষণ করে সমস্ত শরীরে থুথুর প্রলেপ লাগিয়ে দেয়। এসবে উত্তপ্ত হাড়ির মতোই কলাবন্তর ভেতরটা গরম হয়ে উঠতে লাগল। কিন্তু ঈশ্বর সিং এখনো যেন নির্বাপিত। এতকিছুতেও নিজের ভেতর উত্তপতা আসে না তার। যত দান, যত কৌশল তার জানা ছিল সবই তো একজন অভিজ্ঞ পালোয়ানের মতো প্রয়োগ করেছে। অথচ এখনো সে অনুত্তেজনাই। ওদিকে কলাবন্তর দেহের প্রতিটা স্নায়ু আপনাতেই বাঁজছে এখন। সে কাঁপছে আর ঈশ্বর সিংয়ের একই কাজে সে বিরক্ত হয়ে ভরা গলায় ডাক দেয়, ঈশ্বর সিয়া! ‘অনেক তো তাস ভাঁজলে, এবার দান দাও।’

একথা শুনতেই যেন ঈশ্বর সিংয়ের হাতের তাসগুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। আগেকার মতোই নির্বিকার, ক্লান্তভাবে সে কলাবন্তর একপাশে পড়ে যায়। তার মাথার চুলগুলো ঘামে ভিজে ভিজে চুপচুপ । নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে ঠায়, কলাবন্ত তাকে অনেক জাগানোর চেষ্টা করল। এটা ওটা করে উত্তেজিত করার চেষ্টা করল আরো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শেষে রাগে গজর গজর করে কলাবন্ত উঠে যায়। সামনের খুঁটিতে চাদর ঝোলানো ছিল। দ্রুত ওটা শরীরে পেচিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে শ্লেষা ভরে বলে, ‘কোন হারামজাদির কাছে গিয়েছিলে শুনি। কোন মাগির কাছে ছিলে এতদিন। কে তোকে আমার কাছ থেকে এভাবে নিংড়েছে?’

ঈশ্বর সিং বিস্ফোরণের মতো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাটের ওপর ওভাবেই সটান পড়ে রইল।

কলাবন্ত আরো শক্ত হয়। চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে, ‘বলো সে নষ্টাটা কে, কোন নাঙ তোমার। বেশ্যাটা কে?’

ঈশ্বর সিং মরণোন্মুখ ক্লান্তস্বরে বলে, ‘কেউ না কলাবন্ত,

কেউ না।’

কলাবন্ত তার ভরা মাংসল কোমড়ে দু’হাত রেখে চোখ কাঁপিয়ে বলে, ‘ঈশ্বর সিঁয়া আজ আমি সত্য, মিথ্যা জেনে তবেই ছাড়বো। Ñ‘গুরুর কসম খেয়ে বলো, সে তল্লাটে কোন মাগীর কাছে ছিলে?’

ঈশ্বর সিং কিছু বলতে চাচ্ছিল। কলাবন্ত তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘কসম খাওয়ার আগে মনে রেখ আমি সরদার নিহাল সিংয়ের মেয়ে। একতিল মিথ্যে বললে কোপ দিয়ে দু’টুকরো করে ফেলব।’ এবার বলো, ‘সেখানে কোন বেশ্যার কাছে ছিলে এদ্দিন?’

বিষণœ ঈশ্বর সিং সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল শুধু। কলাবন্ত পাগলের মতো দৌড়ে গিয়ে কৃপাণটা হাতে তুলে নেয় এবং ঈশ্বর সিং কিছু টের পাবার আগেই কয়েক কোপ বসিয়ে দিলো তার ঘারে। মুহূর্তেই ফোয়ারার মতো রক্ত ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। তবু যেন কলাবন্তর জেদ মেটে না। বুনো বিড়ালীর মতো সে ঈশ্বর সিংয়ের চুল ছিড়তে লাগল। এবং সমস্ত উদগ্র ক্রোধ, খেদ, বিষাদ, জিঘাংসা একত্র করে কল্পিত সে নারীসত্তাকে অনবরত গালি দিচ্ছিল। ঈশ্বর সিং যেন এবার নড়ে ওঠে শুধু। রক্তাক্ত ঈশ্বর নিরুত্তাপ স্বরে বলে, ‘আর কেন কলা। এবার থাক না।’

ঈশ্বরেরর এ আওয়াজ ভিন্ন। অন্তিম আবেগ সিঞ্চিত এ স্বর শুনে ‘কলাবন্ত পিছু হটে যায়।’

ঈশ্বর সিংয়ের গলা থেকে চিড়চিড় করে রক্তের ধারাটি বেরিয়ে তার গোঁফে এসে গড়িয়ে পড়ে। আর্ত, তীব্র চোখে কলাবন্তর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এত জলদি না করলেই কি চলতো না কলা? যাক তবে যা করেছ ঠিক করেছ।’

কলাবন্তর মনে জিঘাংসাটি তখনো গুমরে মরছে, ‘আমি জানতে চাই মেয়েটা কে! তোর মা?’

রক্তের স্রোতধারাটি ঈশ্বর সিংয়ের মুখ অবধি এসে পৌঁছে, যখন সে তার সামান্য স্বাদ ঠোঁটে চোখে নিল চকিতে সারা শরীরে একটি কম্পমান দ্যুতিতা খেলে গেল বুঝি।

‘আর আমি...আর আমি....এই কৃপাণ দিয়েই ছ’জনকে

খুন করেছি।’

কলাবন্তর কানে এসব কিছুই ঢুকছে না। তার মাথায় কেবল সেই মেয়েটিইÑ ‘আমি জিজ্ঞেস করছি, ওই

হারামজাদিটা কে?’

ঈশ্বর সিংয়ের চোখ মুদে আসছিল। হঠাৎই সে চোখে আলো জ¦লে ওঠল যেন। তখন কলাবন্তকে বলল, ‘তাকে গালি দিস না, সে মাসুম। নিষ্পাপ।’

কলাবন্ত চেচিয়ে ওঠে, ‘আমি জিজ্ঞেস করেছি, কে সে?’

ঈশ্বরের গলার আওয়াজ গড়গড় ওঠে, বলছি কলা বলছি। বলেই সে তার ঘাড়ের পেছনে হাত রাখে এবং তাজা রক্ত দেখে মৃদু হাসেÑ ‘শালার মানুুষ! সত্যিই এক অদ্ভুত জানোয়ার।’

কলাবন্ত অধৈর্য হয়ে বলে, ‘ঈশ্বর সিঁয়া! ওসব রেখে আসল কথা বল।’

রক্তাক্ত মুখে ঈশ্বরের হাসিটা তার গোঁফে লেগে থাকা রক্তের ভেতর আরেকটু ছড়িয়ে যায়। Ñ‘আসল কথাই বলছি, বলতেই যখন হবে তখন সবই বলব।’

এরপর যখন সে বলতে আরম্ভ করল তখন শীতল, ঠান্ডা একটি জলধারা ধীরে তার কপোল বেয়ে নেমে গেলÑ ‘কলাবন্ত, আমার প্রিয়তমা। আমার সঙ্গে কি হয়েছে তোমাকে তা কিছুতেই বলতে পারছি না। মানুষ ও শালা আজব এক পশু। শহরে দাঙ্গা শুরু হলো, সবার মতো আমিও লুটে গেলাম। আর সেসবের সমস্ত গয়নাগটি, টাকাপয়সা তো তোমাকেই এনে দিয়েছি। কিন্তু একটা কথা আমি

তোমাকে বলিনি।’

ঈশ্বর সিং তার ঠোঁটের উপর জমে থাকা রক্তের বিন্দুগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে বলে, ‘যে বাড়িতে আমি লুটে গিয়েছিলাম, সেখানে সাত...সেখানে সাতজন মানুষ ছিল। ...তাদের ছ’জনকেই...এই কৃপাণটা দিয়ে খুন করেছি আমি। আর সেই কৃপাণ দিয়েই...তুই আজ আমাকে...থাক সে কথা। এবার শোন! ...সেখানে একটা খুবই সুন্দরী মেয়ে ছিল...আমি তাকে তুলে নিয়ে আসি।’

কলাবন্ত চুপ করে শুনছিল, ‘ঈশ্বর আবারো ঠোঁটের উপর জমে যাওয়া রক্তের বিন্দুগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়।

কলাবন্ত, আমার প্রিয়া। েেতামাকে কি করে বোঝাই কি ভীষণ সুন্দরী ছিল মেয়েটা।...আমি তাকে মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু বললাম, না ঈশ্বর সিঁয়া। রোজ তো কলাবন্তর স্বাদ নিস, আজ এ স্বর্গীয় ফলকে একটু চেখে দেখ।’

কলাবন্ত শুধু বললো, ‘হু’...।

‘আর আমি তাকে কাঁধে করে বাড়ি থেকে নিয়ে এলাম....পথিমধ্যে....আচ্ছা কি যেন বলছিলাম, আমি...হ্যাঁ পথিমধ্যে একটা গাছের নিচে এসে তাকে...কাঁধ থেকে নামালাম। একটা ডোবার পাশে কিছুটা ঝোপঝাড় তার পাশেই শুইয়ে দিলাম তাকে। প্রথমে একটা ঝাঁকুনি দিলাম কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল...।’ এতটুকু বলতেই ঈশ্বর সিংয়ের গলা শুকিয়ে এল।

কলাবন্ত মুখের থুথু ফেলে গলা পরিষ্কার করে বলল,

‘তারপর ?’

ঈশ্বর সিং অনেক কষ্টে বলল, ‘আমি তাকে শুইয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু...কিন্তু...কিন্তু।’

কলাবন্ত অধৈর্য হয়ে বলল, ‘তারপর কি হলো!’

ঈশ্বর সিং তার নিমীলিত চোখ অতিকষ্টে খুলে জিঘাংসার আগুনে দগ্ধ কলাবন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সে...সে...সে মরে গিয়েছিল। ...একেবারে মরা লাশ। একদম

ঠান্ডা গোশত।’

‘...প্রিয়া এবার তোমার হাতটা ধরতে দাও। কলাবন্ত কাউর ঈশ্বর সিংয়ের হাতে হাত রাখল। যে হাত একেবারে ঠান্ডা। বরফের চেয়েও বেশি শীতল, একদম ঠান্ডা গোশত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close