প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ত্রাণের জন্য হাহাকার
একদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে বানের পানিতে। এ অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। এছাড়াও নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে মানুষের। অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ত্রাণ অনেক কম ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছানোয় মানবেতর জীবযাপন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে। একই সঙ্গে গো-খাদ্য সংকটে গবাদিপশু নিয়ে মারাত্মক বিপদে পড়েছেন কৃষক। নিজেরা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সেখানে চারিদিক ডুবে থাকায় নিরীহ প্রাণীগুলোর মুখে খাবার দিতে পারছেন না ঠিকমতো। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো খবর -
বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় কমলেও বাড়ছে বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানি। গতকাল শনিবার বাঙালি নদীর পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া যমুনার পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাব। বগুড়ার তিনটি উপজেলার পর নতুন করে আরো দুটি উপজেলায় পানি প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে শিবগঞ্জ উপজেলায় এবং ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নাগর নদীর পানি উপচে নন্দীগ্রাম উপজেলার ২০ টি গ্রামের মাঠ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের সারাদীঘর, নিমাইদিঘী, বাঘাদহ, পারঘাটা, গুলিয়া, কৃষ্ণপুর, ঘুনপাড়া, জামালপুর, গোপালপুর, বনগ্রাম, পারশুন ও ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি, রুস্তমপুর, দমদমা, ডেওবাড়ি, বৃষ্ণপুর, শশিনগর, চাতরাগাড়ি, কালিয়াগাড়ি, মুলকুড়ি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে রয়েছে ১ হাজার ৭০ হেক্টর জমির আমন ধান। এই উপজেলায় শুক্রবার থেকে কিছুটা পানি কমতে শুরু করেছে। আর শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের কুপা মহাবালা, মীরাপুর, দোগাছি, বাগইলপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। ফলে দাড়িদহ মাদ্রাসা ও দাড়িদহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।বাঁধ ভাঙা পানিতে শিবগঞ্জ উপজেলায় দুই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও দুইশ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। শনিবার নদীর পানি কমে ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে পানি ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাছুদ আহমেদ জানান, পানি দিন দিন বাড়ছেই। এতে করে ফসলের আরও ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় কোন কোন নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তি রয়েছে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাত উপজেলার নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হাওয়াখানা এলাকায় করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১শ’ মিটার জায়গা ভেঙ্গে যাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা এবং ফুলবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরে করতোয়া নদীর পানির তীব্র স্্েরাত গোবিন্দগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ি-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র গেছে, দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার ৭ উপজেলার ৫৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ঘাঘট ও তিস্তার পানি অনেকটা কমে যাওয়ায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় করতোয়া নদীর পানি ৮ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে কাটাখালি পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জয়পুরহাট : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গতকাল সকালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পারঘাটি এলাকায় তুলশীগঙ্গা নদীর প্রায় ৩০ ফুট বাঁধ ধসে আশপাশের গ্রামে পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর । গ্রামবাসীসহ এদিকে আক্কেলপুর-বগুড়া সড়ক ও শহরে পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাঁধ এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত ৩ টা পর্যন্ত তারা বাঁধ রক্ষার জন্য পাহাড়া দেন তার । পড়ে সকালে তারা বাঁধ ভাঙ্গার কথা শুনতে পেয়ে গ্রামবাসীরা বাঁধ রক্ষা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি। এ ব্যাপারে আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, বাঁধ ভেঙ্গে পৌর এলাকার উপজেলা চত্তরের বিভিন্ন অফিস আদালত ও বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
পটুয়াখালী : মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীর রামপুর লঞ্চঘাট থেকে প্রায় দুইশত ফুট ওয়াপদা বেড়িঁবাধেঁর একাধিক স্থানে ভাঙ্গনের ফলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে কয়েকটি গ্রাম। প্রতিদিন জোয়ারের প্রভাবে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের সন্তোষপুর,আর্জিদুর্গাপুর,মধ্যে ও পূর্ব এবং উত্তর রামপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে আর্জিদুর্গাপুর এলাকার বেড়িঁবাধঁ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ ওই এলাকার লোকজন চলাচল করতে দারুন অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এমনি ওই স্থানে বিকল্প কোন যাতয়াতের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন,মির্জাগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন ভাঙ্গন কবলিত ইউনিয়না। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক স্যারকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং স্যার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান জানান,ওই মির্জাগঞ্জের রামপুরসহ আরো একাধিক গ্রাম নদী ভাঙ্গন এলাকা। তাই নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য ইতিমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে টেকনিক্যাল রিপোর্ট তৈরী কাজ চলছে এবং সারে চার কিলোমিটার নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে।
সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি আবার ও বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার নি¤œাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বিপদ সীমার ১২১ সেঃমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায়, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী হাসান ইমাম। এতে বর্তমানে পানির স্থিতিশীলতার কথাও জানান তিনি। যমুনার পানি বৃদ্ধিতে চৌহালী বাধ ও কাজিপুরে ব্যাপক ভাবে ধ্বস দেখা দিয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলার বিস্তৃর্ন এলাকা ৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর আবাদী জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে জানায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কৃষিবিদ আরশেদ আলী। ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকদের পূনবাসনের পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ৯৬টি মেডিক্যাল টিমও কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মোঃ মঞ্জুর আলম।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মেডিকেল মোড় রেলগেটের পাশে রেল লাইনের নিচে প্রায় একশ গজ জায়গার মাটি সরে গিয়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সেখানে রেল লাইনটি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। আর এতে করে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সারা দেশের সাথে বুড়িমারীর স্থল বন্দরের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল পথের হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড় এলাকায় লাইনের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে লাইনের নিচের মাটি সরে গিয়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গত ৭ দিন ধরে পাটগ্রাম বুড়িমারী স্থল বন্দর রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ রেল যোগাযোগ সচল হবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পরেছেন হজ যাত্রীরাও। গত ১৪ আগস্ট সোমবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেন। লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল হোসেন জানান, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল রুটের অনেক স্থানে রেল লাইনের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় বেশ কিছু স্থানে ছোট বড় কিছু গর্তের সুষ্টি হয়েছে। আমাদের রেলের ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পানি কমলে কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু পানি না কমা পর্যন্ত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যত তারাতারি সম্ভব এই রুটে যেন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় আমরা সে চেষ্টাই করছি।
ঈশ^রগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ঈশ^রগঞ্জে উচাখিলা ইউনিয়নের নতুন চরে বন্যায় কবলিতদের পাশে নেই কেউ। কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদে উজানের বন্যার পানি বাড়তে শুরু করায় প্লাবিত হয়েছে উচাখিলা ইউনিয়নের নতুন চর। এখনো সেখানে পৌছেনি ত্রান। গত কাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন পরিদর্শনে যায়। শুকনো খাবার , বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্য সংকট থাকার পরও প্রশাসন সেখানে শূন্য হাতে পরিদর্শনে যাওয়ায় সাধারন মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।চার দিকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘেরা এ চরে প্রায় তিন হাজার মানুষ তাদের জীবন ও মাল নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর তীর বর্তী এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনে তাদের বসত ঘর হারিয়েছে। আশ্রয়হীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পুরো নতুন চরে। বাড়িঘর পানিতে ভাসছে এমন আরো অর্ধশত পরিবারকে অতিশিঘ্র আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর প্রয়োজন বলে মনে করছেন সেখান কার মানুষ। উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান সরবরাহ শুরু করব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম জানান, এলাকার লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের কে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার সিদান্ধ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ভাবেও ওই এলাকায় সহযোগিতার প্রয়োজন।
কেশবপুর (যশোর) : যশোরের কেশবপুরের বন্যা পারিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আর মাত্র ক’দিন পর ঈদুল আযহা। আশ্রয় কেন্দ্রে ও উচু স্থানে বসবাসকারি অন্ততঃ ১০ হাজার পরিবারের এবার ঈদ উদযাপন করতে হবে সেখানেই। গত বছরের ঈদুল আযহার নামাজ তারা যশোর সাতক্ষীরা সড়কের উপর পড়েছিলেন। এবারও তাদেও একই অবস্থা। গত ২৯ দিন যাবৎ কেশবপুর পৌর এলাকার ৫ হাজার পরিবার ও উপজেলার ১১ ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে অবর্ণনীয় দূর্ভোগে রয়েছেন। যশোর সাতক্ষীরা সড়কের পানি নেমে গেলেও কেশবপুরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কগুলি পানির নিচে রয়েছে। যার কারনে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অপরদিকে ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আশ্রিতরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারিভাবে গঠিত মেডিকেল টীম ৩ হাজার বানভাসীকে চিকিৎসা দিয়েছে। পানি পচে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে রোগ বালাই। কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, তার পৌরসভা এলাকার ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবণ যাপন করছেন।
গত ১৪ আগষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুর রহমান আকন্দ পাউবোর কর্মকর্তাদের নিয়ে বড়েঙ্গা ৩ নদীর মোহনা, বুড়িভদ্রা ও আপার ভদ্রা পরিদর্শন করে প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক আহুত মতবিনিময় সভায় অংশ গ্রহন করেন। এ সময় তিনি জানান, পলির হাত থেকে গ্যাংরাইল বেসিং এর আওতাভূক্ত শ্রীহরী, হরিহর, আপারভদ্রা ও বুড়িভদ্রা নদীকে রক্ষায় আপারভদ্রা নদীর কাশিমপুর নামক স্থানে আগামী ডিসেম্বর থেকে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় আপদকালীন সময়ে ভাসমান খনন যন্ত্র দিয়ে ৩টি নদীর পলি অপসারণ শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি মনিরামপুর ও কেশবপুরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্যে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) : জামালপুরে ইসলমাপুর উপজেলা চরপুটিমারি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশু চরপুটিমারি ইউনিয়নে চিনার চর গ্রামের হুরমুজ আলীর মেয়ে সুরাইয়া (৪) গতকাল শনিবার সকালে বন্যার পানিতে পড়ে মারা যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা চরপুটিমারি ইউনিয়নে চিনারচর গ্রামের হুরমুজ আলীর স্ত্রী রুপালি বেগমের মেয়ে সুরাইয়া (৪) কে বাড়িতে রেখে ধাঁন ভাঙ্গাতে যান।বাড়ির চারদিকে বন্যার পানি থাকায় শিশুটি আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে খেলা করার জন্য সবার আড়ালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির পার্শে ডোবায় পড়ে সে ডুবে যায়।পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। চরপুটিমারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সমাছুজ্জামান সরুজ মিয়া বন্যার পানিতে ডুবে পড়ে শিশু সুরাইয়া (৪) মারা যাওয়ায় ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেন ।
"