চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

ছয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানের অর্থে অনিয়ম, নামমাত্র টাকায় স্বাক্ষর

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ২৩ জুলাই অনিয়মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মুদাফৎথানা এসসি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। সেসময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহের আলি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

এদিকে, সাধারণ শিক্ষক, সুবিধাবঞ্চিত এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করা হলেও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের দাবি সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ উন্নয়ন-১ শাখার সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতাভুক্ত পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস স্কিমের আওতায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান হিসেবে উপজেলার ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি মাদ্রাসায় ৫ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো- রাধাবল্লব উচ্চবিদ্যালয়, ফকিরেরহাট উচ্চবিদ্যালয়, মুদাফৎথানা এসসি উচ্চবিদ্যালয়, পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও চিলমারী সিনিয়র মাদ্রাসা।

প্রকল্পের বরাদ্দ অপারেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা অনুদানের অর্থ শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনা ২০ শাতাংশ, বইপত্র-লাইব্রেরি শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্রয় বাবদ ৩০ শতাংশা, ছাত্র-ছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য স্কুল/কলেজ/ মাদ্রাসা/ ফ্যাসিলিটির (অবকাঠামো, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার, কমনরুম ইত্যাদি) উন্নয়ন বাবদ ২৫ শতাংশ, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় বাবদ ১৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়ন বাবদ ১০ শতাংশ টাকা ব্যয় করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রাপ্ত অর্থ থেকে শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনা ২০ শতাংশ টাকা দেওয়া ছাড়া অধিকাংশ কাজে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রণোদনাতেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বইপত্র-লাইব্রেরি শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভাউচারকে (রশিদ) বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার, কমনরুম ইত্যাদি উন্নয়নের স্থলে সামান্য কাজ করে নয়ছয় হিসাব দেখানো হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনার কিছু টাকা দিয়ে বণ্টণ অর্থের কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় ও প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়নের সামান্য টাকা দিয়ে কাগজে-কলমে বরাদ্দ অর্থের অঙ্কে স্বাক্ষর নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

রাধাবল্লভ উচ্চবিদ্যালয়ে হাতল চেয়ার, হাতল ছাড়া চেয়ার, র‌্যাক, হেলনা বেঞ্চ ও বড় টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের ভাউচার (রশিদ) দেওয়া হলেও বাস্তবে ওইসব পণ্য ক্রয় করা হয়নি। সেখানে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ নবনির্মিত ভবনের সঙ্গে দেওয়া সামগ্রীকে দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম এই অর্থ দিয়ে মাঠ ভরাটের কথা জানালেও সে মাটি ভরাট ছিল অন্য প্রকল্পের অর্থে।

পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় দেখা যায়, সিঁড়ির পাশে সরকারিভাবে দেওয়া আগের কিছু বই ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের অর্থের বিষয়ে মাদ্রাসাটির সুপারিনটেনডেন্ট জানান, আইরিন নামের এক প্রতিবন্ধীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিনিধি ওই প্রতিবন্ধীর মুখোমুখি হলে সে ১৫ হাজার টাকা পেয়েছে বলে জানায়। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে ২৫ হাজার টাকাসহ অপর দুই প্রতিবন্ধীর নামে ২৫ হাজার টাকা প্রদান দেখিয়ে রশিদ দেওয়া হয়। পরে প্রতিবন্ধী আইরিনকে আরো ৩ হাজার টাকা দিয়ে আগামী মাসে ২ হাজার টাকা দেবেন এবং ৫ হাজার টাকা অফিস কেটে নিয়েছে বলে আইরিনকে জানিয়েছেন সুপারইনটেনডেন্ট আবদুল আজিজ আকন্দ।

ফকিরেরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত বাক প্রতিবন্ধী নুর আসমা, কামরুজ্জামান উল্লাস ও রুহুল বাবুদের নাম থাকলেও তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিদ্যালয় থেকে কোনো টাকা-পয়সা পায়নি। চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার প্রতিবন্ধী ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদের নামে ৫ হাজার টাকা প্রদান দেখানো হলেও তার মা জানান, তার ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। একই বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রদত্ত বরাদ্দ স্যারেরা খেয়ে ফেলেছে। আমরা টাকা পাই নাই।’

নুর আসমার বাবা নুরনবি বলেন, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও সেই বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মিনহাজুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদানের ৫ লাখ টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহের আলী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান হিসাবে উপজেলার মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান ৫ লাখা টাকা করে পেয়েছে। তারা খাতওয়ারি ব্যয় করে যথাযথ ভাউচার (রশিদ) জমা দিয়েছেন। আমরা তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close