নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

শীতে বিপাকে শ্রমজীবীরা

হিম হিম শীত জেঁকে বসেছে বান্দরবানের লামা উপজেলায়। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলো। আর সেটি অব্যাহত থাকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত। কোনো কোনো সময় দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখাও মেলে না। গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন শ্রুমজীবী মানুষেরা।

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে রয়েছেন অতিকষ্টে। শীত নিবারণের জন্য দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরতরা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা। আবার কেউ কেউ গরম কাপড়ের দোকানে দিকে ভিড় জমাচ্ছেন।

এদিকে উপজেলায় অর্ধ লক্ষাধিক শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৯২০টি কম্বল। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। গত বছর বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৬৬৪টি কম্বল। এ পর্যন্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, পৌরসভা সহ ত্রাণ, দুর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও দুই একটি সংস্থা ছাড়া শীতার্তদের সহায়তায় কোনো বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি বলেও জানান স্থানীয়রা। এদের পাশাপাশি দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের শীতের কষ্ট লাঘবে গরম কাপড় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সচেতনমহল সহ জনপ্রতিনিধিরা।

মংহ্লা চিং মারমা, বাবু মং মার্মা ও জয় মার্মা বলেন, বেশি শীত পড়ছে। আমাদের গরম কাপড় যা আছে, তা দিয়ে শীত ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র শীতের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় পরিবারের খাদ্য যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাড়ার লোকজন খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে।

বাঙালি শ্রমিক আবদুর রহিম, বশির, জসিম ও আবুল হোসেন বলেন, এ বছর অতিরিক্ত শীতের কারণে আমরা কোনও কাজ ঠিকমতো করতে পারছি না। কাজ করতে না পারায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমা পারুল জানান, পরিষদের পক্ষ থেকে একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মাঝে এক হাজার ৫০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পৌরসভা এলাকায় আড়াইশ ও সরই ইউনিয়নের এক হাজার দুস্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে চট্টগ্রামস্থ শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার নামক একটি সংস্থা।

লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, আমার ইউনিয়নে আনুমানিক দুই হাজারেরও বেশি গরিব মানুষ রয়েছে। কিন্তু ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলে শীত বস্ত্র কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ৬৫০ পিস। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এখনো অনেক মানুষ শীতার্ত রয়েছে। একই অবস্থা অন্য সব ইউনিয়নগুলোতেও বিরাজ করছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক শহীদুল ইসলাম বাবলু বলেন, শীতজনিত কারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে। গত এক মাসে হাজারেরও বেশি রোগী আন্ত বিভাগে ভর্তিসহ বর্হিবিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি শীত মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নের দুস্থ ও গরিবদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে তিন হাজার ৯২০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে এসব কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরও করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close