আমিনুল ইসলাম রানা, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

  ২৩ নভেম্বর, ২০২২

কৃষিতে ন্যায্য মজুরি বঞ্চিত নারী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অঞ্জনা বেগম (৩৫)। তিন সন্তানের জননী। সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনিন্দন কাজ করেন। ছেলে-মেয়েকে স্কুলের পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরিবারের সকলের জন্য করেন রান্না। এরপর মাঠে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করেন কৃষিকাজ। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আবারও শুরু করেন ঘরের দৈনিন্দন কাজ। ঘুম থেকে উঠে, ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত অবসর নেই অঞ্জনা বেগমের।

অঞ্জনা বেগম বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে পুরুষদের পাশাপাশি কৃষিকাজ করি। এখন কৃষিকাজ করতে খারাপ লাগে না। তবে অনেক কষ্ট হয়। পরিবারের দৈনিন্দন কাজ করে কৃষিকাজ করতে হয়। সেই হিসেবে নারী কৃষক বলে কোনো মূল্যায়ন পায়নি কখনও। কখনও পাবো কি না সেটাও বলতে পারি না।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ সাত্তার মেম্বার পাড়ার আরশাদ মোল্লার স্ত্রী হাজরা খাতুন (৬০) বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছি। একাধিকবার নদী ভাঙনের কারণে সব কিছু হারিয়েছি। অর্থ কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিকাজ করতে হচ্ছে। পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে মজুরি নিয়ে কথা থেকে যায়। পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেও মজুরি তাদের অর্ধেকের চেয়ে কম। যেখানে পুরুষ কৃষক মজুরি পায় ৫০০-৬০০ টাকা। আমরা পায় ২০০-৩০০ টাকা। প্রতিবাদ করলে কর্ম হারাতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এখন আমরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘কৃষিকাজ করে পুরুষের সমান হাজিরা পেলে আরো অনেক নারী কৃষিকাজে আগ্রহী হবেন। সুতরাং নারীদের কৃষিকাজে আগ্রহী হওয়ার জন্য মজুরি পুরুষের সমান করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাখতে হবে।’

সাত্তার মেম্বার পাড়ার কাশেম আলী শেখের স্ত্রী করিমন বেগমের (৫৫) তিন মেয়ে ও দুই ছেলে এবং অসুস্থ স্বামী। পদ্মা নদীর ভাঙনে হারিয়েছেন বসতভিটা, আবাদি জমি। এখন নিজের থাকার জন্য জমি নেই। বাধ্য হয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে কোনো রকম ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন। অসুস্থ স্বামী কাজকর্ম করতে পারেন না। অভাবের তাড়নায় কৃষিকাজ করেন করিমন বেগম।’

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় অনেক নারী কৃষক আছেন। তারা কৃষিকাজে পুরুষের চেয়ে অনেক সফল। অনেক নারী কৃষক আছেন অন্যের জমিতে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। এসব নারীর মধ্যে উৎসাহ তৈরি করতে পুরুষের সমান মজুরি করা প্রয়োজন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, রাজবাড়ী জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। রয়েছেন অনেক নারী কৃষক। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন অনেক নারী। অনেকে নিজের জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করছেন। শুধু পুরুষ কৃষক নয়, নারী-পুরষ সব কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষিবান্ধব সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close