বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ০২ জুলাই, ২০২২

পরিত্যক্ত সোয়া কোটি টাকার সড়ক

পাবনার বেড়া উপজেলায় বছর কয়েক আগে বড়শিলা থেকে নলভাঙা হয়ে খাকছাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পর আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামে মানুষের মধ্যে। কারণ উপজেলা সদর থেকে একসময় গ্রামগুলো প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। সড়কটি নির্মিত হওয়ার পর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যাতায়াত একেবারেই সহজ হয়ে যায়। সড়কে চলাচল করতে থাকে অসংখ্য যানবাহন। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি ভেঙেচুরে এতটাই বেহাল হয়ে পড়েছে যে সেখান দিয়ে কোনো যানবাহনের চলাচলের আর উপায় নেই। ফলে সড়কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে বড়শিলা-নলভাঙা-খাকছাড়া সড়কের কাজ শেষ হয়। বেড়া পৌরসভার বড়শিলা থেকে চাকলা ইউনিয়নের নলভাঙা হয়ে খাকছাড়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সড়কটির বেশির ভাগ অংশই বিল এলাকার মধ্য দিয়ে চলে গেছে। এ সড়কটি নির্মাণের পরে উপজেলা সদরের সঙ্গে চাকলা ও কৈতলা ইউনিয়নের নলভাঙা, খাকছাড়া, চাকলা, দমদমা, জয়নগর, কৈতলাসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে ওঠে। সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে এতে যানবাহন চলাচল বেড়েই যাচ্ছিল।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমনিতেই সড়কটি সরু ও নিচু করে যেনতেনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এর ওপর গত কয়েক বছরে এলজিইডির পক্ষ থেকে সড়কটির বিন্দুমাত্র সংস্কারও করা হয়নি। নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে সড়কের কয়েকটি স্থান ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া স্থানসহ সড়কের অনেক স্থানই বর্ষা ও বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যেতে থাকে। ভেঙেচুরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়া সড়কেও এতদিন ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। কিন্তু এবারের বর্ষা আসার আগেই বৃষ্টিতে সড়কের কয়েকটি স্থান প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এসব স্থান কোনো যানবাহনের পক্ষেই পার হওয়া সম্ভব নয়। এর পরও না জেনে হঠাৎ কোনো যানবাহন এই সড়কে ঢুকে পড়লে প্রচণ্ড দুর্ভোগ সহ্য করে লোকজনের সহায়তা নিয়ে আবার সেটিকে ফিরে আসতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে সড়কটিকে প্রায় পরিত্যক্ত হিসেবেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কের কিছু কিছু অংশ বিলের পানিতে বিলীন হতে দেখা গেছে। বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে সেখানে কোনো যানবাহন এমনকি লোকজনকেও চলাচল করতে দেখা যায়নি।

বরশিলা গ্রামের ভ্যানচালক ইব্রাহীম বলেন, ‘এক সময় আমরা এই পথে লোকজন ও মালামাল নিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন এই পথে রিকশা, ভ্যান চালানো দূরের কথা হেঁটে যাওয়াই মুশকিল।’

নলভাঙ্গা গ্রামের আলহাজ আবদুর রাজ্জাক মোল্লাসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে বড়শিলা পর্যন্ত যখন রাস্তাটি হয় তখন আমাদের নাকালিয়া বাজার করা ও বেড়া যাওয়ার জন্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা কমে এসেছিল। আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম রাস্তাটি পেয়ে। কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই রাস্তাটি একেবারে ভেঙে যায় আর এখন তো ভ্যান-রিকশা দূরের কথা হেঁটে যাওযার অবস্থা নেই। রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানান তারা।

খাকছাড়া গ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক হোসেন বলেন, ‘সড়কটি চালু হওয়ার পর আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। বড়শিলা, নলভাঙা প্রভৃতি গ্রাম থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী এই সড়কে রিকশা-ভ্যানে চড়ে বিদ্যালয়ে আসত। সড়কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ায় যানবাহনে দূরের কথা হেঁটেও শিক্ষার্থীদের আসার উপায় নেই। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।’

এলজিইডির বেড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সড়কটি মেরামতের জন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close