অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ১১ মে, ২০২২

ফাইলবন্দি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রস্তাবের প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি করতে পারেনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের কাগজপত্র পাঠানো হয় দুই বছর আগে।

তবে বেজা থেকে দুবার জায়গা পরিদর্শনে যান নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। তারপরও এখনো ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে হাজার হাজার বেকার যুবক ও উদ্যোক্তার মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত জায়গা নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছে জেলাবাসী।

জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়। সংসদ সদস্য থাকাকালীন আবদুল ওদুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের দাবি করলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে এলে জনসভায় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ আবারও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জোরালো দাবি জানান। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এলাকা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ২০১৯ সালের ২৫ মে শেখ হাসিনা সেতু এলাকার নিমগাছি মৌজার প্রায় ২০০ একর জমি পরিদর্শন করেন। কিন্তু যাতায়াতের সড়কটি প্রশস্ত না থাকায় প্রতিনিধি দলটি আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

এরপর ২০২১ সালের ৩০ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ দ্বারিয়াপুর এলাকার প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন এবং স্থানটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক দ্বারিয়াপুর এলাকার জায়গাটি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান। তারপরও এখন পর্যন্ত কাজের কোনো অগ্রগতি মেলেনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে শুধু কৃষিপণ্য ও আমের ওপর নির্ভরশীল এ জেলার মানুষ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুয়ারও খুলে যাবে। বৃহৎ এবং একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম বলেন, অর্থনৈতিক জোন স্থাপিত হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। সর্বোপরি এই অঞ্চলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে। সেইসঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ বলেন, প্রতিটি জেলায় অর্থনৈতিক জোন ও আইটি ভিলেজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পনা নেয়। তার মাধ্যমে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব আসে। সেটি ঘিরে শেখ হাসিনা সেতু-সংলগ্ন এলাকায় খাসজমি ও হরিপুর-দ্বারিয়াপুর এলাকার জায়গা পরিদর্শন করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।

আবদুল ওদুদ আরো বলেন, এ জেলার প্রতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা অবিচার করে থাকেন। যার কারণে প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। এই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হলে জেলাটিসহ আশপাশের উপজেলার হাজারও বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close