চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, সিংড়া, লালপুর, নলডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের আয়ে উপজেলার বহু মানুষের ভাগ্য বদলেছে। সরকারি তালিকাভুক্ত ছাড়াও কয়েকশ হাঁসের খামার রয়েছে এসব অঞ্চলে। এসব খামারে ১০ লাখেরও বেশি হাঁস রয়েছে। হাঁস পালনে এই অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুচেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গা বিলের বিভিন্ন স্থানে খামার রয়েছে। কেউ জালের ঘের তৈরি করে হাঁস পালন করছেন। ভোরে খামারি এবং এর সঙ্গে যুক্ত মানুষ হাঁস নিয়ে অথৈ বিলে যান। সন্ধ্যায় আবার হাঁস নিয়ে খামারে ফিরে আসেন।

বিলসা গ্রামের সামাদ আলী জানান, শতাধিক ক্যাম্বেল হাঁস পালন করছেন। হাঁসগুলো পাশেই বিলে সারা দিন খায়। সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে কিছু খাবার আবারও দেওয়া হয়। সিংড়া উপজেলার নিংগইন এলাকার খামারি সোহাগ জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। চার থেকে পাঁচ মাস বয়সি হাঁস কেনেন সোহাগ। সাড়ে পাঁচ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৪৮০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে তিন থেকে চার লাখ টাকা লাভ থাকে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলে খামারের ৪৫১টি হাঁসের খামার তালিকাভুক্ত রয়েছে। প্রতি খামারে ১০ থেকে ১৫ হাজার হাঁস রয়েছে। তালিকার বাইরেও পারিবারিক পর্যায়ে শত শত খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বেকারত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছেন। খামার পর্যায়ে রাজহাঁস পালন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি ও পাতিহাঁস ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯২টি। বর্ষার শুরুতে খাদ্য কম লাগায় এক দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করেন খামারিরা। ছয় মাস পর থেকে এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এতে খামারিরা খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি আয় হয়। বছরে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, চলনবিলের আবহাওয়া অনুযায়ী তিন জাতের হাঁস বেশি পালন করা হয়। ক্যামবেল জাতের হাঁস সবচেয়ে বেশি পালন হয়। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের হাঁসও পালন করছেন খামারিরা। খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার হাঁস পালনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এসব খামারে রয়েছে সাত থেকে আট লাখ হাঁস। প্রতিটি পরিবার ব্যক্তিগত খামার থেকে ভালো আয় করছেন বলে জানান তিনি।

"