উজ্জ্বল নাথ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)

  ০৮ আগস্ট, ২০২০

হাটহাজারীর ত্রিপুরা পল্লীতে উন্নয়নের ছোঁয়া

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ১২ পরিবার পেল দুর্যোগ সহনীয় ঘর

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১ নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামে বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ত্রিপুরা অধিবাসী। এ ইউনিয়নের সোনাই ও মনাই দুই ত্রিপুরা পল্লীতে ১০৪ পরিবারের বসবাস। নানামুখী সমস্যায় বসবাসরত ত্রিপুরা পল্লীবাসি প্রশাসন ও সরকারের উদ্যোগের কারণে বর্তমানে সোনালী দিনের আলোয় জলমল করছেন।

জানা যায়, ত্রিপুরা জন-গোষ্ঠি স্থানীয় বশিরহাটের আশেপাশে বসবাস করেছিল। তাদের নিজস্ব বসভিটা ছিল। এসব ভিটায় তাদের মাথা গোজার ঠাঁই ছিল। কালের আর্বতে তারা সরে গিয়ে পশ্চিমের স্থানীয় পাহাড় টিলায় বসবাস শুরু করেন। অনাদরে অবহেলায় চলে তাদের দিনাতিপাত। আয় উপাজর্নের পদ বলতে ছিল পরের জমিতে শ্রম বিক্রি, বর্গা চাষাবাদ, গবাদী পশু পালন, পাহাড় থেকে বনজ দ্রব্য সংগ্রহ করে বিক্রি করা। এসব কাজে তারা প্রয়োজনীয় পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত ছিল। সমস্যার পাহাড় নিয়ে তাদের দিনাতিপাত চলত। যোগাযোগ সমস্যা, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, সুপেয় পানিয় জল ও চিকিৎসা সংকট, স্যানিটেশন সমস্যা, পুষ্ঠিহীনতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অসেচতনা, শিক্ষার ব্যাপারে অভাবের কারণে উদাসিনতা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করার সুযোগ না থাকাসহ নানা সমস্যা মধ্যে তাদের দিনতিপাত ছিল।

২০১৭ সালে বর্ষা মৌসুমে মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় প্রশাসনের নজরে আসে দুই পল্লীবাসির উপর। সেই সময় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সেখানে পৌঁছতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে। ২০১৮ সালে সোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে হাম রোগে কয়েক জন শিশুর একসাথে মৃত্যু হওয়ায় প্রশাসন এ দুই পল্লীর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেন। জেলা ও উপজেলার পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র পল্লীর অধিবাসিদের সমস্যা সমধান ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় মনাই ত্রিপুরা পল্লীর যাতায়তের সমস্যা সর্বাগ্রে সমধান করা হয়। এরপর থেকে এ উপজেলার ক্ষুদ্র -নৃগোষ্ঠির দুই পল্লীতে বসবাসকারী অধিবাসীদের সোনালী দিনের সূচনা হতে থাকে। দুই পল্লীতে বসবাসকারীদের সমস্যা চিহিৃত করে সমধানের জন্য প্রশাসন পরিকল্পনা গ্রহন করেন। পরিকল্পনা অনুসারে এসব পল্লীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুতায়ন, সুপেয় পানীয় ও জলের ব্যবস্থাসহ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে ঘোষিত ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এর আদলে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির পল্লীর উন্নয়ন কার্যক্রমসহ গৃহহীনদের মধ্যে বাসস্থান প্রদানের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়। সে হিসাবে ইতিমধ্যে দুই পল্লীর অধিবাসীদের মধ্যে ১২টি দূর্যোগ সহনীয় বাসস্থান সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় ৫৭টি পরিবারের বসবাস। ওই এলাকা পরিদর্শন কালে পার্শ্ববর্তী সোনাই ত্রিপুরা পাড়ায় এর আগে হামরোগে কয়েকজন শিশু মৃত্যুর ঘটনার কথা অবহিত হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এ ব্যাপারে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা অনুসারে দুই বছরের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির উন্নয়নে কি কাজ করতে হবে করনীয় নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, বাসস্থান, সুপেয় পানীয় জল, শিক্ষা, স্যানেটেশন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সহায়তা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি ও শিক্ষা সামগ্রী, স্কুলের ইউনিফর্ম, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক উপকরণ প্রদানের করণীয় নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী প্রায় ১২ পরিবারকে সমতলের সরকারি খাস জায়গায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর সরকারের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়েছে। আরও চারটি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণাধীন ঘরগুলো অবিলম্বে তাদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।

মনাই ত্রিপুরা পাড়ার সর্দ্দার সচিন ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে আমার শহর আমার গ্রাম নামে যে কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন বর্তমানে হাটহাজারীর সোনাই মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার যথাযত বাস্তবায়ন হতে চলেছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার অত্যাবশকীয় উপদানগুলো পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন হওযায় আমরা এলাকাবাসী আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে যেতে পেরেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close