শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক

শ্রীমঙ্গল-বাহুবলের আধা কিমি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক

ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাহাড়ি উঁচু নিচু আঁকাবাঁকা সড়কে ডাকাতদের রাজত্ব চলছে। এই সড়কের বাহুবল উপজেলার কামাইছড়া মাত্র আধা কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনায় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী সাধারনের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

আসছে শীত মৌসুমে পাহাড়ী এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় সড়কে ডাকাতের আতংকের মাত্রা আরও তীব্রতর হচ্ছে।

আঞ্চলিক এ মহাসড়কের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা অংশের কামাইছড়া থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুছাই নামক এলাকায় প্রায়ই ঘটছে ডাকাতি। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সার চালক ও যাত্রীসহ স্থানিয়রা। এমনকি স্থানিয় সংসদ সদস্যও তাদের হাতে রক্ষা পায়নি।

এ আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজারেরও বেশী যান-বাহন চলাচল করে। মহাসড়কে পুলিশের অপ্রতুল টহলের সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা। ডাকাতরা সংখ্যায় ৪০-৫০ জন। ১০ থেকে ১৫ জন অংশ নিয়ে ২-৩টি দলে বিভক্ত হয়ে মুখোশ পরে ডাকাতি করার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, স্থানীয় ও পাশ্ববর্তী চুনারুঘাট উপজেলার ৪০-৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ১২-১৫ জন ডাকাতকে সনাক্ত করতে পেরেছেন তারা। কিন্তু থামানো যাচ্ছে না সংঘবদ্ধ ডাকাতদের তৎপরোতা। কোন ভাবেই তাদের ধরতে পারছে না পুলিশ।

গাজীপুর রিজিয়নের আওতাধীন সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশের দেয়া তথ্যমতে গত রমজান মাস থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কে একই স্থানে রাস্তার দুপাশের গাছ ফেলে কমপক্ষে ৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ডাকাতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন পর্যন্ত রেহাই পাননি।

এই আঞ্চলিক মহাসড়কের কামাইছড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৫০০ গজ দূরত্বে ডেঞ্জার জোন রাবার বাগানের পাহাড়ী রাস্তার বাঁকে সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর রাতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতরা রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলে প্রথমে একটি বালুবাহী গাড়ী আটকিয়ে পথরোধ করে। হাফপ্যান্ট ও মুখোশ পড়া ২০-২২ জন ডাকাত ৪০-৫০টি যানবাহনে ডাকাতি করে। তাদের হাতে লাঠি ও দা ছিল। এ সময় ডাকাতরা গাড়ীর বাতি নিভিয়ে যাত্রীদেরও মারধর করে আতংক সৃষ্টি করে।

মিরপুর নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক মো. ওয়াহিদ মিয়া বলেন, একই রাতে হাফ প্যান্ট ও মুখোশ পরা ডাকাতরা রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলে রেখে তার সিএনজি অটো রিক্সাসহ ৪-৫টি যানবাহন আটকিয়ে ডাকাতি করে।

কামাইছড়া পুলিশ ক্যম্পের এসআই মহরম আলী বলেন, ‘বাহুবল ইউএনও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় সরকারী ভাবে এসব স্থানে ২০-৩০টা লাইট বসানোর চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে এখানে আমরা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করবো।’

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নান্নু মন্ডল বলেন, ‘মহাসড়কের নিরাপত্তা দেয়াই আমাদের মুল দায়িত্ব। এই আঞ্চলিক মহসড়কের মিরপুর থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা এই ফাঁড়ির আওতায়। এর মধ্যে মহা সড়কের বিপজ্জনক জোন হিসেবে কামাইছড়া পাহাড়ি বাঁক থেকে রাবার বাগান পর্যন্ত হাফ কিলোমিটার সড়ক এলাকা ডাকাত প্রবণ। গত রমজান মাস থেকে এখন পর্যন্ত এই এলাকার একই স্থানে কমপক্ষে ৭ বার গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গত বছর ১৭ রমজানে একই স্থানে ডাকাতের কবলে পড়েন কুলাউড়ার এমপি আব্দুল মতিন। পরে শ্রীমঙ্গল থেকে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন।’

মহাসড়কের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, এই এলাকার নিরাপত্তায় একজন এএসআই এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যর টহল দল থাকে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা এক দল এবং সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৫জন করে টহল দেয়। এই হাফ কিলোমিটার বিপজ্জনক এলাকায় ষ্ট্যান্ডবাই পাহারার জন্য হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত জনবল নেই।

র‌্যাব-৯ এর সিপিসি-২ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা অস্থির আছি। ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক এই মহাসড়কে ডাকাতিতে নতুন কয়েকটি চক্র সক্রিয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে চুনারুঘাট, বাহুবল ও শ্রীমঙ্গল এই তিন এলাকার লোকজন এসবে জড়িত। তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর করছি। আশা করছি শিঘ্রিই অভিযান শুরু করা যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close