আদিল হোসেন তপু, ভোলা

  ১৭ মার্চ, ২০১৮

নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিনেও জেলেরা পায়নি পুনর্বাসনের চাল

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। এতে জাটকা সংরক্ষণ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে টানা দু-মাসের অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তারা পায়নি পুনর্বাসনের চাল। তাই পেটের দায়ে জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়েই কোনো কোনেরা জেলে নদীতে নামলেও অধিকাংশ জেলে পরিবারগুলোরই জীবন জীবিকা কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে।

জাটকা সংরক্ষণ ও অন্য প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দু-মাস ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে তেতুলিয়া নদীর ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ও মেঘনা নদীর ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে সকল ধরনের জাল ফেলা মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে সরকার। এ সময় জাটকা ইলিশের পাশাপাশি পোয়া, বাটা, তপসিমাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের সময় ডিম ছাড়ার জন্য অভয়াশ্রমে চলে আসে। তাছাড়া ইলিশের পোনাগুলো বড় হওয়া পর্যন্ত এ অভয়াশ্রম গুলোতে ছুটাছুটি করে। সংঘত করনেই এ দু-মাস নদীতে মাছ ধরাসহ সকল ধরনের জাল ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমগুলোতে অবাধে শিকার করছে মৎস্য। গেলবার মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের নির্লশ পরিশ্রমে ব্যপক সফলতা পেলেও টানা দুই মাসের চলমান অভিযানে অনেকটা ব্যর্থতায় রূপ নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সকাল কিংবা বিকেল যে কোন সময়ই নদীর তীরে গেলে চোখে পড়বে মাছ ধরার এমনই চিত্র। নাম প্রকাশ না করে চররুস্তমের বেশিরভাগ জেলেরা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় চলমান অভিযানে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো কঠোরতা দেখা যায়নি। এক কথায় বলতে গেলে এবারের অভিযান চলছে একেবারেই ঢিমেতালে। নদীর তীরবর্তী কাচিয়া ইউনিয়নের আশিক মেম্বার বলেন, গত বছর দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরার অপরাধে যে পরিমাণ জেলেদের কারাদ- দেওয়া হয়েছে, এবার সেই কারাদ-তো দুরের কথা নদীতে সেই পরিমাণ অভিযানও করা হয় না। ইলিশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, নদীতে যে দ্ইু মাসের অভিযান চলছে তা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। কোনো জেলেই মাছ ধরা থেকে বিরত নেই। জাল ট্রলার নিয়ে অধিকাংশ জেলেকেই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর সদর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৮৪জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। অথচ এ বছর অভিযান পরিচালনা করে এ যাবত ১১৯ জন জেলেকে আটক করলেও এদের মধ্যে কোন জেলেকে কারাদ- না দেওয়ায় তারা সামান্য টাকা জরিমানা দিয়ে আবার নদীতে মাছ ধরতে নেমে যায়। কারাদ- না হওয়াতেই জেলেরা মাছ ধরতে উৎসাহী হয় বলে তিনি মনে করেন। এদিকে, জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জেলেরা পায়নি তাদের পুনর্বাসনের চাল। তাই পেটের দায়ে জীবিকার সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই কোন কোন জেলে নদীতে নামলেও অধিকাংশ জেলে পরিবারগুলোই চলছে অর্ধাহারে অনাহারে। ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মোছলেউদ্দিন মাঝি বলেন, আমাদের মতো জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ ছাড়াও দেশের মানুষকেও বাঁচিয়ে রাখি। কিন্তু আমাদের দিকে দেখার যেন কেউই নেই। একই এলাকার হারুন মাঝি বলেন, সরকার অভিযান দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের মতো গরীব অসহায় জেলেরা কিভাবে চলবো সেই দিকে কারোই খেয়াল নেই। অভিযানের ১৫ দিন কেটে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কোন সাহায্য সহযোগীতা করা হয়নি।

তবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জেলার সাত উপজেলায় জেলেদের পুনর্বাসনের চাল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে চাল আসা মাত্রই তালিকা অনুযায়ী জেলেদের চার মাস হিসেবে ৮ হাজার ৩শ’ ৪৪ মেট্রিক চাল জেলার সাত উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাবর চাল পাঠিয়ে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত জেলেরা কেন চাল পায়নি সে সম্পর্কে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগেই প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বরাবর চালের ডিউ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেন চাল বিতরণ করেনি তা আমি সঠিক বলতে পারছি না।

দুইএকদিনের মধ্যেই জেলেদের পুনর্বাসনের চাল তাদের হাতে পৌছে দেওয়া হবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে এমনটি দাবি করা হলেও চাল দেওয়ায় বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা কয়েক দিন যাবত রাজনৈতিক কারণে একটু ব্যস্ত থাকায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করার সময় করতে পারিনি। তবে জেলার নিবন্ধনকৃত এক লাখ ৩২ হাজার জেলের মধ্যে ৫২ জেলের নামে চাল বরাদ্ধ আসায় অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা তালিকা অনুযায়ী চাহিদা পাঠিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে পুরাতন তালিকা অনুযায়ী ৫২ হাজার জেলের জন্য চাল পাঠিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মন্ত্রণালয় চিঠিও দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist